১৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলে গেল আরাফাত

১৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হার মানল পাবনার বেড়া উপজেলায় অপহরণের পর উদ্ধার হওয়া আহত শিশু আরাফাত (১১)। আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার বাবা আবদুল মাজেদ।
এদিকে গত দুইদিনে অভিযান চালিয়ে আরাফাতের অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার মো. মশিউর রহমান জানান, বেড়া পৌর এলাকার স্যানালপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আবদুল মাজেদের ছোট ছেলে আরাফাত হোসেন গত ২১ আগস্ট বিকেলে অপহৃত হয়। পরের দিন ২২ আগস্ট দুপুরে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনের একটি জঙ্গল থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় আরাফাতকে উদ্ধার করে বেড়া থানা পুলিশ। প্রথমে তাকে বেড়া হাসপাতাল, পরে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার বিকেলে শিশু আরাফাত মারা যায় বলে জানান ওসি।
অপহরণের ঘটনায় আরাফাতের বাবা আবদুল মাজেদ গত ২৬ আগস্ট বেড়া থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন। এরপর গত শনিবার ও রোববার পৃথক অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার কিশোরকে আটক করে পুলিশ।
আটক কিশোরেরা হলো স্যানালপাড়া এলাকার ইমরান হোসেন, মনোয়ার হোসেন, রমজান আলী ও বিশু ওরফে বিশা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান জানান, আটক ইমরান, মনোয়ার ও রমজানকে আজ সোমবার বিকেলে পাবনা আমলি আদালত ৩-এ হাজির করা হয়। তারা বিচারক এ কে এম রওশন জাহানের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এসআই হাবিবুর আরো জানান, মূলত টাকার লোভে শিশু আরাফাতকে অপহরণ করেছিল আসামিরা। অপহরণের পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে আরাফাতের শ্বাসরোধ করে। পরে মৃত ভেবে বেড়া হাসপাতালে পেছনে জঙ্গলে ফেলে রাখে। এরপর আরাফাতের পরিবারের কাছে ১৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে পুলিশ মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণ দাবি করা অপহরণকারীদের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশু আরাফাতের বাবা আবদুল মাজেদ বলেন, ‘আমার ছেলেকে তো চিরদিনের জন্য হারালাম। কিন্তু যারা অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কেউ যেন ছাড়া না পায়। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’