এরশাদের বিরোধিতা, নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তাঁর এ বক্তব্যের এক সপ্তাহের মাথায় সেই নির্বাচন কমিশনেরই প্রশংসা করলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে দেশের চলমান রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিরোধীদলীয় নেতা। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর নিজের আস্থার কথাও জানান তিনি।
গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নাই। এ ব্যাপারে যেটুকু সন্দেহ ছিল, আজ তা দৃঢ় হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা যেন পৌর নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নেন, সে জন্য একজন নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন। তাঁর স্থান প্রধানমন্ত্রীর ওপরে, এটা তিনি ভুলে গেছেন। তিনি তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।’
রওশন এরশাদের যদি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা থাকে, তাহলে দলের প্রধান কেন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? জানতে চাইলে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আসলে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতে অনেক কিছু বলতে হয়। পার্টি চাঙ্গা করতে তিনি সেগুলো বলেছেন। ইসিকে উনি প্রশ্নবিদ্ধ করেননি।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচন কমিশনের ওপর ‘আস্থা’ রাখতে না পারলেও রওশন এরশাদ বলছেন, ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়েছে। আশা করি, তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি। জনগণ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পাবে এবং গ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা যাতে নির্বাচিত হতে পারে, সেটাই আমাদের দাবি।’
এরশাদ আর রওশন—এ দুজনের মধ্যে কার বক্তব্যটি দলের বক্তব্য, তা জানতে চাইলে রওশন এরশাদ বলেন, ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে উনি কথাটা বলেছেন। ইসি তো স্বাধীন, তাহলে আবার সরকারের সহযোগিতা চাইবেন কেন?'
পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা টিকতে পারেনি কারণ, তাদের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। অনেক সময় নমিনেশন নিয়েছে, তবে পরে চিন্তাভাবনা করে প্রত্যাহার করে নেয়। তাই আমাদের প্রার্থীর সংখ্যা কম। নির্বাচনকে ঘিরে হামলা-সংঘাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় অনেক ঘটনা ঘটে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, ভারতেও এমন ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া উনি (নির্বাচন কমিশনার) সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন। আমি আশা করি যে উনি পারবেন।’
এ ছাড়া খেলায় হারজিত থাকবে বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদের এই বিরোধীদলীয় নেতা।
দেশের ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে জাতীয় পার্টির ৭৪ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি উল্লেখ করে রওশন বলেন, 'যা হচ্ছে সেটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর, বিএনপির সঙ্গে তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীর।'
জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, 'ভয়-ভীতি যারা দিচ্ছে, তারা সরকারের। যেহেতু তারা সরকারে আছে, সে জন্য ভয় দেখাচ্ছে। প্রতিটি নির্বাচনেই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে।'
সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে মাঝপথে সরে দাঁড়াবেন কি না—জানতে চাইলে রওশন বলেন, ‘নির্বাচনে দাঁড়ায় কেন? জেতার জন্য। নির্বাচন থেকে সরব না। নির্বাচনকে প্রহসন বলা যাবে না। এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।’
এ সময় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, 'এতদিন পর শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কথা বলেন, তাহলে তো নিজের অস্তিত্বই নেই। সেটেলড ইস্যু নিয়ে বিতর্ক করা উচিত হয়নি। এটা দুঃখজনক। আমরা সবাই তো বাংলাদেশ চেয়েছি। ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে কথা বলাটা সামান্য ব্যাপার নয়। এ ধরনের বক্তব্য আসা উচিত হয়নি।'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলের চিফপ্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, কাজী ফিরোজ রশীদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, ফখরুল ইমাম, ইয়াহিয়া চৌধুরী।