বীথির রোগ নিয়ে যা বললেন চিকিৎসকরা

অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত শিশু বীথি আক্তারের (১২) মুখের অতিরিক্ত লোম লেজার থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তার রোগ নির্ণয় করতে পেরেছেন চিকিৎসকরা। অনেক গবেষণার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন বীথির চিকিৎসক ও হরমোন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে।
এনটিভি অনলাইনকে ফরিদ উদ্দিন বলেন, বীথির রোগের নাম ‘বিয়ারস জুরকিউজ সিনড্রম’। এ রোগটি বীথির তিনটি অঙ্গে আক্রান্ত করেছে। প্রথমত ‘কনজেনিটাল হাইপার ট্রাইকোসিস’ বা জন্মগতভাবে লোমকেশে আক্রান্ত, দ্বিতীয়টি হলো ‘ঘাম হাইপার প্লেসিজ’ বা জন্মগতভাবে মুখের মাড়ি আক্রান্ত। তৃতীয়টি হলো ‘এনলার্জমেন্ট অব দ্য ব্রেস্ট’ বা জন্মগতভাবে স্তনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সারা বিশ্বে এ রোগ খুবই বিরল। আমরা বোর্ড মিটিং করে দুই মাস ধরে বীথিকে নিয়ে অনেক গবেষণা করে এবং জার্নাল পড়ে দেখেছি, পৃথিবীতে এ রোগে যারা আক্রান্ত হয়েছে তারা সাধারণত শরীরের যেকোনো একটি অঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে। কারো লোমকেশ সমস্যা, কারো মুখের মাড়ি সমস্যা, আবার কারো স্তন সমস্যা। একসঙ্গে তিনটি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এ নিয়ে তিনজন। এর আগে এ রোগে ভারত ও চীনে দুজন আক্রান্ত হয়েছিল।
ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বীথি জন্মগতভাবে তিনটি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। প্রথমত, ওর পুরো শরীরে লোমকেশে ঢেকে গেছে, দ্বিতীয়ত, মুখের ভেতরের মাড়ি বড় হয়ে দাঁত ভেতরে ঢুকে গেছে। এতে করে দেখতে অনেকটা নেকড়ের মতো মনে হয়। তৃতীয়ত তার স্তন এত বেশি বড় হয়ে গেছে যে শরীরের ওজনের চেয়ে যা অনেক বেশি ভারী।’
যেভাবে চিকিৎসা শুরু হবে
প্রথম ধাপে বীথিকে মুখের লেজার থেরাপির মাধ্যমে অতিরিক্ত লোম সরানো হবে। এরই মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় গ্রিন রোডে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী লেজার থেরাপির মাধ্যমে বীথির মুখের লোম পরিষ্কার করেন। কমপক্ষে ২০ বার এ থেরাপি দিতে হবে।
এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্তন স্বাভাবিক করে আনা হবে। আগামী ৩০ মে বিএসএমএমইউতে তার স্তনের চিকিৎসা করা হবে। এতে করে তার কষ্ট অনেকখানি কমে যাবে। শেষ ধাপে তার মুখের মাড়ির অপারেশন করে ঠিক করা হবে।
বীথির বাবা আবদুর রাজ্জাক জানান, বীথিকে হাসপাতালের ডি ব্লকের ১৬ তলার হরমোন বিভাগ থেকে বুধবার সি ব্লকের নয়তলায় ২২৬ নম্বর ওয়ার্ডে নেওয়া হবে।
আবদুর রাজ্জাক জানান, বীথির জন্ম থেকেই মুখে দাড়ি-গোঁফসহ সারা শরীরে লোম ছিল। এক বছর আগে স্তন অস্বাভাবিক আকারে বাড়তে থাকে। স্তনে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এর আগে সাত বছর বয়সে দাঁত পড়ে যায়। পরে আর সেই দাঁতও গজায়নি।
গত ১৬ এপ্রিল থেকে বিএসএমএমইউর ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বীথিকে ভর্তি করা হয়।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার জয়ভোগ গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের তিন সন্তানের মধ্যে বড় বীথি। জয়ভোগ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।
গত এক বছরে বীথির শরীরে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। তার স্তন অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে থাকে। এখন তা নেমে যায় পেটের নিচ পর্যন্ত। স্তনের ভারে সোজা হয়ে হাঁটতে পারে না সে। প্রচণ্ড ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করে সব সময় কান্নাকাটি করে বীথি। অবশেষে দিনমজুর বাবা মেয়ের কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে ঋণ করে মেয়েকে নিয়ে আসেন ঢাকায়।