বিদ্যালয় স্থানান্তরের দ্বন্দ্বে শ্রেণিকক্ষে তালা, পড়াশোনায় বিঘ্ন

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় স্থানান্তর ইস্যুতে দুদিন ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে। দ্রুত সমাধান না হলে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
আজ সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি টিনশেড শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে। শিক্ষার্থীরা মাঠের খোলা আকাশের নিচে ও বারান্দায় বসে ক্লাসের অপেক্ষায় রয়েছে। টয়লেটেও তালা থাকায় পাশের বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয়ের পুরোনো প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান বিদ্যালয়টি ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাশে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। গত শুক্রবার রাতে ছনকা বাজার এলাকায় অস্থায়ী ঘর তৈরি করে রোববার থেকে সেখানে জোরপূর্বক ক্লাস চালু করা হয়েছে। আর পূর্ব পাশের মূল ভবনে তালা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীরা দুই দিন ধরে ক্লাস করতে পারছে না।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলে, ‘আমরা রাজনীতি চাই না, ক্লাস করতে চাই। আমরা নদীর পূর্ব পাশে থাকি, কেন সাঁতরে গিয়ে পশ্চিম পাশে যাব?’
১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আক্তার জানায়, ‘দুই দিন ধরে রোদের মধ্যে বসে আছি, সব ক্লাস রুমে তালা। দ্রুত ক্লাস করতে চাই।’
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন জানান, নদী থেকে ২৫০ ফুট দূরে অবস্থিত বর্তমান ভবনে গত পাঁচ বছরে কোনো ভাঙনের ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিক কারণে বিদ্যালয় স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে এবং এ কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
ছনকা গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজার এলাকায় স্কুল সরালে মেয়েরা ঝুঁকিতে পড়বে। খেয়া পারাপারেও অনেক সময় লাগবে। বিদ্যালয়টি বর্তমান স্থানে থাকা উচিত।’
সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়নি, স্থানীয় অভিভাবকদের সমঝোতা জরুরি ছিল।’
এ ঘটনায় সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, সরেজমিন তদন্তে শিক্ষার্থীদের অভিমত নিয়েছেন এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বর্তমান স্থানে বিদ্যালয় রাখতে চায়। আইন অমান্য করায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।