আন্দোলন ও ভোগান্তির শহর ঢাকা

রাস্তা দখল করে নানা দাবিতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামছে বিভিন্ন পক্ষ। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে জনগণ। কখনও যৌক্তিক আর কখনোবা ঠুনকো দাবিতে রাজপথে সবর হয়ে উঠছেন আন্দোলনকারীরা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজপথে দুই শতাধিকের বেশি আন্দোলন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে একের পর এক আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বসতে শপথ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো ঘোষণা না আসায় ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছে ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। টানা ৬ দিন ধরে ডিএসসিসির সামনের রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করছেন তারা।
এছাড়া কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে কর্মসূচি চলমান রয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২০ মে) শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে বকেয়া পরিশোধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পোশাকশ্রমিকদের পদযাত্রা কাকরাইল মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। বেলা ৩টার দিকে পল্টনের শ্রমভবন থেকে মিছিল নিয়ে পোশাকশ্রমিকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ রওনা হয়ে কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন সংলগ্ন মোড়ে পৌঁছলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। শ্রমিকরা পরে সেখানে রাস্তাতেই বসে পড়েন বলে জানান ডিএমপি ট্র্যাফিক রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল হান্নান খান।
গত কয়েকদিন প্রধান প্রধান সড়কে আন্দোলন কর্মসূচির কারণে ব্যস্ত ঢাকায় এক রকমের স্থবিরতা নেমে এসেছে। জনগণের ভোগান্তি উঠেছে চরমে।
ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপর দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীরা রাজপথকে বেছে নেয়। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আনসার সদস্যদের একাংশ বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে অবরোধ করে। পরবর্তীতে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে বেগ পেতে হয়। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন নামে, তবে সাত কলেজ নিয়ে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণার পর আন্দোলন থেমে যায়। এছাড়া নার্সিং সেক্টরে চলমান দুর্নীতি, বৈষম্য দূরীকরণে ১৭ দফা দাবিতে আন্দোলন করে ‘সচেতন নার্স ও মিডওয়াইফ সমাজ’। এছাড়া আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা।
এর আগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে আন্দোলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলে আন্দোলনকারীরা ফিরে যায়।
এসব ঘটনা প্রবাহ প্রসঙ্গে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকার ৯ মাসে প্রায় ২০০টি আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ব্যাংকগুলোতে টাকা ছিল না। ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ছিল। আমাদের বৈদেশিক আমদানি স্থবির ছিল। সরকারে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনা, প্রশাসনিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে ৬-৭ মাস সময় দিতে হয়েছে। এর বাইরে সরকারের মূল যে কাজগুলো—বিশেষ আদালত গঠন করা, অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচার কাজ শুরু করা, আমাদের যে সংস্কারগুলো করা দরকার— সংস্কার কমিশন গঠন করা, জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, নির্বাচন কমিশন গঠন করা। ব্যাপক একটা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। হ্যাঁ, এই কাজগুলো সরকারের জন্য একটা বিরাট চাপ ছিল, কষ্টকর ছিল।‘
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সরকারের ৯ মাস পার হয়েছে, সংস্কার কখন হবে, বিচারগুলো দেখতে চাই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে চাই। সর্বোপরি নির্বাচনের তারিখ বা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা বিষয় আছে। সব মিলিয়ে বলব না যে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ, বলব না যে সরকার এসব বিষয়ে উদাসীন আছে।’
এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে কর্মী-সমর্থকেরা। এজন্য আগামীকাল বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। আজ বিকেলে গুলিস্তানে নগর ভবনের সামনে ষষ্ঠ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে করা এই আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাবেক সচিব মশিউর রহমান এ আলটিমেটাম ঘোষণা করেন। মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা আগামীকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না এলে আবারও সকাল ১০টায় একত্রিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি করব।’ একইসঙ্গে ঢাকা অচলেরও হুমকি দেন তিনি।