মামলার এক নম্বর আসামি হয়েও ওসি হিসেবে পদায়ন, যোগদান করেই ছুটিতে

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা একটি জি আর মামলার এক নম্বর আসামি হওয়া সত্ত্বেও ভালুকার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মিজানুর রহমানকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রশ্ন ও আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত ১৮ মে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মিজানুর রহমানকে কোতোয়ালি মডেল থানায় নতুন ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভালুকা মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) পদে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং ‘ক্রসফায়ার’ এর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে গত বছরের ১৮ আগস্ট, রোববার নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় একটি মামলা (নং-৯২) দায়ের করেন বিএনপিনেতা নুরনবী বাচ্চু। ঘটনার সময় তিনি সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৪২, ৩৬৫, ৩৮৬, ৩৮০, ১৭০, ৪২৭, ৫০৬ ও ১১৪ ধারায় পেনাল কোড ১৮৬০ এর অধীনে ওসি মিজানুর রহমানকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেনবাগ থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সেনবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রউফ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “২০১৮ সালের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে এবং মিজানুর রহমান স্যার ওই মামলার প্রধান আসামি। আসামিরা কেউই জামিন নেননি। যারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি তারা পলাতক হিসেবে আছেন। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।”
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ওসি মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলফোন নম্বরে একাধিকবার কল করার চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, “স্যার গতকাল যোগদান করেছেন। আজকে আমার কাছে চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে তিনি ছুটিতে গেছেন।”
তবে, এজাহারভুক্ত একজন রাজনৈতিক মামলার আসামিকে কীভাবে কোতোয়ালি মডেল থানার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হলো তা নিয়ে এখন পুরো শহরে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার একজন বিএনপিনেতা বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সেনবাগ থানার ওসি থাকাকালীন মিজানুর রহমান বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতন করতের। অন্যায়ভাবে অনেকদিন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গিয়ে বছরের পর বছর জেল খাটিয়েছেন। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তার বিতর্কিত ভূমিকা ছিল। এই সময়ে ওসি মিজানুর রহমানের জেলে থাকার কথা। কিন্তু তার বদলে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন এই খবরে আমরা মর্মাহত।
ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন বলেন, শুধু ওসি নয় ফ্যাসিস্ট এর সহযোগী কাউকেই কোনো পদে দেওয়া উচিত নয়। তাদের এখন বিচার হওয়ার সময়।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে পুলিশ ভেরিফিকেশন করেই ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে। তার নিজ এলাকা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। আজ সকালে হঠাৎ জানতে পারি তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। তারা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।