পরিবেশ আদালত ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন জরুরি : পবা

দেশে ১৭ কোটি মানুষের জন্য মাত্র দুটি পরিবেশ আদালত। পরিবেশ আদালতে নাগরিক সরাসরি মামলা করতে পারে না। পরিবেশ আদালত ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন না করা হলে দেশের পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে না। আইন ও আদালত আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে সামাজিক, রাজনৈতিক, ভৌগলিক এবং মানুষের রীতিনীতি ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষণা বা এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক জরিমানা আদায়ের ক্ষমতা প্রদান, পরিবেশ রক্ষায় ফোর্স গঠন, পরিবেশ আদালত আইনে নাগরিকদের সরাসরি মামলা করার ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি। এজন্যে পরিবেশ আদালত ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন জরুরি।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার (৪ জুন) পরিবেশ আদালত আইন নিয়ে প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স, পাবলিক হেলথ লইয়ার্স নেটওয়ার্ক, বারসিক, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), ওপেন সিসেমি ফাউন্ডেশন, আর্থ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। পবার সম্পাদক মেসবাহ সুমনের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স এর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (৪ জুন) এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশ আদালত আইন সংশোধন আজ একটি অতি জরুরি বিষয়। পরিবেশ আইন সংশোধনের পাশাপাশি টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর মন্ত্রণালয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা জরুরি।
পরিবেশবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে পরিবেশ দূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিবেশ আদালত আইনে সরাসরি মামলা দায়েরের অধিকার না থাকা, নাগরিক অধিকার হরণের শামিল।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, আইনগুলো দুর্বলভাবে তৈরি করা হয়, যাতে নাগরিক প্রতিকার না পায়। আইনগুলো প্রণয়নের সাথে জনগণ জড়িত না থাকার কারণে তাদের স্বার্থের সাথে সংঘাত থাকে। যারা পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করে তাদের উন্নয়নবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু পরিবশদূষণ, খাল ও নদী দখলদারদের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বারসিকের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের খাদ্য দূষণ হচ্ছে। খাদ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, পরিবেশ আদালতে এক্সপার্ট নিয়োগ দেওয়ার বিধান থাকতে হবে, পাশাপাশি পরিবেশ আদালতের বিচারকদের পরিবেশ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বার্থে দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করতে হবে।
অ্যাডভোকেট মমতাজ বলেন, পরিবেশ আইন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আইন বিষয়ে সচেতনতার অভাবেও আইনভঙ্গ হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
নাগরিক অধিকার ফোরামের সভাপতি তৈয়ব আলী বলেন, পরিবেশ রক্ষায় নাগরিকদের দায়িত্বশীল করতে আইনের প্রয়োগ জোরদার করতে হবে।
অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ বান্না বলেন, পরিবেশ রক্ষায় বিষয়টি পরিকল্পনায় থাকতে হবে এবং উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশ সাংবাদিক এহছানুল হক জসিম বলেন, পরিবেশ আইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলে পরিবেশ আদালত আইনে মামলা করা যায় না। বাংলাদেশে প্রায় ২১০০ রিট হয়েছে, কিন্তু তার অর্ধেক সংখ্যক মামলা হয়েছে পরিবেশ আদালতে। এতেই প্রমাণিত হয় পরিবেশ আদালত আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সভায় অ্যাডভোকেট উম্মে হাবিবা বলেন, পরিবেশ আইনে ঘটনাস্থলে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি। পরিবেশকর্মী নাসির আহমেদ চৌধুরী নাগরিকদের মাঝে আইনের সচেতনতা বৃদ্ধি জোরদার করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নগর পরিকল্পনাবিদ ফাহমিদা ইসলাম বলেন, পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন একটি অপরাধ এই বিষয়টিতে প্রচারণা জোরদার করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা এবং মতামত নেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বেলার অ্যাডভোকেট হাসানুল বান্না বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত পুলিশদের, যেমন টুরিস্ট পুলিশদের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
আরও বক্তব্য দেন মাঠ রক্ষা আন্দোলনের কর্মী সৈয়দা রত্না, পরিবেশকর্মী পারভীন ইসলামন, চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদ আ ফ ম সারোয়ার, উন্নয়নকর্মী আমিনুল ইসলাম বকুল, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার মোহাম্মদ তাহাজ্জত আলী, পরিবেশকর্মী হাফিজুর রহমান ময়না প্রমুখ।