আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে মোল্লাহাটে দুই ভাই নিহত

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার সিংগাতী গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই চাচাতো ভাই বিএনপি ও জামায়াতনেতা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন আজিজুল চৌধুরী (৩৫) ও মুরসালিন চৌধুরী (৩৫)।
এ সময় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। মারাত্মক আহত ইমতিয়াজ (১৬) ও তরিক শরীফকে (৩৬) রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে আওয়ামী লীগনেতা জানিক চৌধুরী, মাসুম চৌধুরী গ্রুপের লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা আজিজুল চৌধুরী (৩৫) ও তার আপন চাচাতো ভাই চুনাখোলা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুরসালিন চৌধুরীকে (৩৫) হত্যা করে।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক হিটলার বিশ্বাস দুজনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত করেন।
নিহত মুরসালিন চৌধুরীর বোন শাহানা সুলতানা রহিমা জানান, ঈদের দিন সন্ধ্যায় আজিজুল চৌধুরী পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামে ভাগনি তাজিরাকে কোরবানির মাংস দিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। সন্ধ্যার একটু আগে পথিমধ্যে সিংগাতী গ্রামের সাহেব আলী চৌধুরীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলার আসামি জানিক চৌধুরী ও মাসুম চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র লোক বিএনপিনেতা আজিজুলকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত আহত করে মুষূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের সামনেই প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে আজিজুল চৌধুরী ও তার চাচাতো ভাই মুরসালিন চৌধুরীসহ উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ৩২ জন আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে আজিজুল চৌধুরীসহ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সঙ্কটজনক অবস্থায় আজিজুল ও মুরসালিনসহ ১৮ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিটলার বিশ্বাস আজিজুল চৌধুরীকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মুরসালিন চৌধুরীর মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলার আসামি হিসেবে জানিক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু ওই ঘটনায় আজিজুল ও মুরসালিনরা পুলিশকে সহযোগিতা করে জানিককে ধরিয়ে দিয়েছে বলে সন্দেহ করে। তখন মুরসালিনদের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে জানিক চৌধুরীর গ্রুপ।
শাহানা সুলতানা রহিমা অভিযোগ করে বলেন, আজিজুল চৌধুরীর ওপর হামলা ঘটনার পর মোল্লাহাট থানা পুলিশকে বারবার ফোন দেই। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে জরুরি সেবা ট্রিপল ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেই। পরে মোল্লাহাট থানার ওসি শফিকুল ইসলামসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও রহস্যজনক কারণে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে পুলিশের সামনেই আমার ভাই মুরসালিন চৌধুরীকে প্রতিপক্ষ জানিক চৌধুরী, মাসুম চৌধুরী, দুলাল চৌধুরী, তারিক চৌধুরী সহ একদল সশস্ত্র লোক নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। হামলার সময় আমি অসহায় হয়ে ওসি শফিকুল ইসলামের পা জড়িয়ে ধরি। কিন্তু তাতেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ওসি শফিকুল ইসলাম। বরং উল্টো তিনি আমাকে বেয়াদব মহিলা বলে ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন। পুলিশ এগিয়ে এলে আমার ভাই রক্ষা পেতেন। হামলার সময় আট-নয় গজ দূরে ওসি দাঁড়িয়ে থাকলেও রহস্যজনক কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, সামাজিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ও হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন, পক্ষপাতিত্ব অভিযোগ ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বলেন, ঢাল-সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয়পক্ষ রাতের অন্ধকারে যেভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল, এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। একপর্যায়ে আমরাও নিরাপত্তাহীন ছিলাম। দুটি পক্ষই মারমুখি অবস্থায় ছিল।
নিহতের বোন রহিমাকে ধমক দেওয়া বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এরকম কাউকে বলিনি। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে সামাজিক ও গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। উভয় গ্রুপের মধ্যে ছয়টি মামলা চলমান রয়েছে। লাশ দুটির ময়নাতদন্ত আজ রোববার গোপালগঞ্জ হাসপাতল মর্গে সম্পন্ন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। দোষীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল রয়েছে।