ঈদে আম ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত!

ঈদের টানা ছুটিতে ক্রেতার অভাবে আম বিক্রি না হওয়ায় কোটি কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিরা। টানা ১০ দিন ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহণ বন্ধ থাকার কারণে চলতি মৌসুমে আমের রাজধানী খ্যাত সাপাহার উপজেলার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিদের ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আম ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটিতে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত গরমের কারণে আম্রপালি জাতের আম একযোগে পাকতে শুরু করেছে। নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম্রপালি জাতের আম আগামী ১৮ জুন থেকে বাজারে আসার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত গরম, বৈরী আবহাওয়া, গাছে আগাম মুকুল আসাসহ নানাবিধ কারণে এ বছর আম্রপালি জাতের আম আট থেকে ১০ দিন আগে পাকতে শুরু করেছে।
চাষিদের অভিযোগ ও ক্ষয়ক্ষতি
সাপাহার উপজেলার সিমু শিপলা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী, আম ব্যবসায়ী ও আমচাষী সাখাওয়াত হোসেন জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে লাভের আশায় তিনি ৪০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের গাছ লাগিয়েছিলেন। এ বছর গাছে আম ধরেছে ভালো। কিন্তু সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে। তিনি বলেন, ‘সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছি। ঈদের টানা ১০ দিন ছুটি থাকায় ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারে আমের তেমন কোনো বেচাকেনা নেই। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মণ আম পচে যাওয়ার কারণে ফেলে দিতে হচ্ছে।’
সাখাওয়াত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশের দিনে বলা হয়েছিল, যদি কারও আম অগ্রিম পেকে যায়, তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে গাছ থেকে আম পাড়া এবং বিক্রয় করার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু গত কয়েকদিন ঈদের ছুটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে আবেদন করেও আম পাড়ার কোনো অনুমতি তিনি পাননি। এতে সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার আম অবিক্রিত থাকছে এবং তা ফেলে দিতে হচ্ছে।’
সাখাওয়াত হোসেন আরও অভিযোগ করেন, কৃষি অফিসে গেলে তারা অনুমতির জন্য ইউএনও অফিসে যেতে বলে। আবার ইউএনও অফিসে গেলে তারা কৃষি অফিসে যেতে বলে অনুমতির জন্য। প্রতিদিন শতশত আমচাষী অনুমতির জন্য এই দুই অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেও আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এই সব সমস্যার কারণে আম চাষিরা গাছ থেকে আম পাড়তে পারছে না, যার কারণে আমের লোকসান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিসের বেঁধে দেওয়া আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ বছর আম পাড়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বৈরী আবহাওয়া আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্যালেন্ডারের ঘোষিত তারিখের ১০ থেকে ১২ দিন আগেই আম পেকে গেছে। বিপুল পরিমাণ পাকা আম নিয়ে তারা ভীষণ বিপদে পড়েছেন।
একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, এখন বাজারে আম্রপালি জাতের আম মণ প্রতি ৪০০০ থেকে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই উচ্চ মূল্যের আম অবিক্রিত থেকে আড়তে পচে যাওয়ায় আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।
কৃষি বিভাগের বক্তব্য
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২০২৪ সালের আমের ক্যালেন্ডারে আম পাড়ার যে তারিখ নির্ধারণ করা ছিল, চলতি ২০২৫ সালে তার থেকে আম পাড়ার তারিখ তিন দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকা এবং কুরিয়ার ও পরিবহণ বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে তারা যে পরিমাণ ক্ষতির কথা বলছে, সে পরিমাণ ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। জেলা প্রশাসন এবং জেলা কৃষি অফিস সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। এটাও বলা হয়েছে যে, যদি কোনো আম অগ্রিম পাকা শুরু করে, তাহলে স্থানীয় ইউএনও অফিস অথবা কৃষি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষে আম পাড়া যাবে। তিনি বলেন, নওগাঁতে চলতি বছরে আমের বাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি থেকে চার হাজার কোটি টাকা আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে সফল হবে।