করোনারোধে রাঙামাটিতে স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যাপক প্রস্তুতি

ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে পার্বত্য পর্যটন-জেলা রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
কাপ্তাই হ্রদ, পাহাড় ও বনঘেরা রাঙামাটি প্রায় সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে। তবে চলতি ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে অন্যান্যবারের চেয়ে পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা, নৌযান চলাচল এবং স্থানীয় জনসমাগম মিলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ঈদের ছুটি ঘিরে বাড়তি ভিড় এবং ভারতের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বিবেচনায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, প্রয়োজনে আইসোলেশন, ঘাটগুলোতে স্বাস্থ্য ডেস্ক স্থাপন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস মজুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যেসব স্থানে ভিড় বেশি, সেসব জায়গায় স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নূয়েস খীসা বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমরা আগেই প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছি। জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঘাটগুলোতে পর্যটকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি রয়েছে।’
ডা. নূয়েস খীসা বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার এবং আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, কারও উপসর্গ দেখা দিলে তাকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। মারাত্মক অসুস্থ হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের অনুরোধ করছি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, করোনা মহামারিকালে রাঙামাটিতে ৭৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়। তখনকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবারও একটি সম্ভাব্য সংক্রমণ ঢেউয়ের মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের এই ঢল নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলার প্রতিটি স্তরে সমন্বিত নজরদারি চালানো হচ্ছে।
রাঙামাটি যেন করোনার নতুন ঢেউয়ে তার স্বাভাবিক ছন্দ না হারায়, সেই লক্ষ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা
এদিকে কোভিডের নতুন ধরন মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে নজরদারি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদারে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন ধরনের কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার লক্ষ্যে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছে অধিদপ্তর। সেগুলো হলো—
সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয়
১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং উপস্থিত হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা
২. শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত মাস্ক পরা
৩. হাঁচি-কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা
৪. ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ময়লা ঝুড়িতে ফেলা
৫. ঘনঘন সাবান-পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া
৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা
৭. আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
১. জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা
২. রোগীর মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া
৩. রোগীর সেবাদানকারীদেরও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করা
৪. প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালে, আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) যোগাযোগ করা।