মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা ডাকাতির ঘটনায় বিদেশি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও গাড়িসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ বুধবার (১৮ জুন) সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা হলেন মো. জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), মো. সোহাগ হাসান (৩৪), মো. জলিল মোল্লা (৫২) ও পলাশ আহমেদ (২৬)।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার জানান, গত ২৭ মে সকালে মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক রাসেল ও তাঁর ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর-১১ নম্বরের সি-ব্লকের বাসা থেকে একটি কালো ব্যাগে ব্যবসার ২১ লাখ টাকা ও বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে হেঁটে রওনা দেন। তাঁরা শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলির মাথায় পৌঁছালে সেখানে আগে থেকে চারটি মোটরসাইকেলে ওত পেতে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজন মাস্ক পরিহিত ডাকাত তাদের পথরোধ করে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ডাকাতদের একজন জাহিদুল হক চৌধুরীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাঁর হাতে থাকা টাকা ভর্তি ব্যাগটি জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। জাহিদুল হক এবং তার শ্যালক রাসেল ডাকাত দলকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে মুখোশধারী এক ডাকাত পিস্তল দিয়ে ফাঁকা গুলি করে ভীতি সঞ্চার করে এবং অপর একজন ধারালো চাপাতি দিয়ে জাহিদুলের কোমরের বাম পাশে আঘাত করে। চাপাতির আঘাতে জাহিদুল গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে ডাকাতরা টাকার ব্যাগটি নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত মিরপুর-১ নম্বরের দিকে চলে যায়। ঘটনাটি একজন পথচারী মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিবির একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন, জড়িতদের গ্রেপ্তার, ব্যবহৃত অস্ত্র ও গাড়ি উদ্ধারের লক্ষ্যে মাঠে নামে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির টিম ঘটনায় ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মাইক্রোবাসটির চালক জাফরকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর মাইক্রোবাসটি ডাকাতির কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করে। ডিবি টিম তার দেওয়া তথ্য মতে গাজীপুর, টঙ্গী এলাকা হতে মাইক্রোবাসটি জব্দ করে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একাধিক টিম একইসঙ্গে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ মোস্তাফিজ, পলাশ, দিপু ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির পাঁচ লাখ তিন হাজার টাকা ও ১০৬টি বিভিন্ন মানের বৈদেশিক মুদ্রা, দুই লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট এবং ঘটনার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই পেশাদার ডাকাত এবং তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, খুন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারসহ অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।