গাজীপুরে কারখানায় শ্রমিক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়িতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানার ভেতরে ম্যাকানিক্যাল মিস্ত্রি হৃদয়কে (১৯) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শফিকুল ইসলাম নামে আরেক নিরাপত্তাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (৩০ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে কোনাবাড়ী সেলিমনগর এলাকা থেকে এই নিরাপত্তাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে কুদ্দুসনগর পেয়ারা বাগান এলাকা থেকে হাসান মাহমুদ মিঠুন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন।
ওসি বলেন, সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে নিরাপত্তাকর্মীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান ওসি।
এর আগে ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।
নিহত শ্রমিক মো. হৃদয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতারবাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি ওই কারখানায় ম্যাকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে একটি অফিস কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে বের করছে কয়েকজন। তখন তার মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। তাকে নির্দয়ভাবে পেটানোর পরও দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে হৃদয় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।
এ ঘটনায় নিহত হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে কোনাবাড়ি থানায় ২৮ জুন দিনগত রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ ২৯ জুন অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ ওরফে মিঠুন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। হাসান মাহমুদ ওই কারখানারই শ্রমিক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মো. হদয় গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ম্যাকানিক্যাল মিস্ত্রি (অনকল) হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতোই গত ২৭ জুন সকালে কারখানায় যান তিনি। তবে ডিউটি শেষ করে বাসায় না ফেরায় তার ভাই ও মা কারখানার দিকে যান। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান কারখানার শ্রমিকরা হত্যার ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। তারা মরদেহের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানানো হয়। পরে তারা হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।
মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, ‘গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে মারধর করে হত্যা করা হয়। পরে এটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য মরদেহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।’
কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন বলেন, ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার পর কারখানাটি দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও এখনও বন্ধ রয়েছে।