গোপালগঞ্জে ১০ মামলায় মোট আসামি ৯৮৫০, গ্রেপ্তার ৩১২

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় আরও দুটি নতুন মামলা করা হয়েছে। ফলে, চারটি হত্যা মামলাসহ মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০-এ। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং ৩১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কারাগার ভাঙচুরের মামলা
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে জেলার তানিয়া জামান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, অজ্ঞাতনামা ৯০০ থেকে এক হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দাঙ্গা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই জেলা কারাগারে এই হামলা চালানো হয়েছিল।
মামলায় উল্লেখিত উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুন্সি আতিয়ার রহমান, গোপালগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এম নাসির আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম জুলকদর রহমান, মুকসুদপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম শিমুলসহ আরও অনেকে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৬ জুলাই এনসিপির পদযাত্রা শেষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের ৯০০ থেকে ১০০০ নেতাকর্মী লাঠিসোটা, ঢালসড়কি, বল্লম, লোহার রড, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, হাতুড়িসহ মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জেলা কারাগারের প্রধান ফটকে এসে হামলা চালায়। তারা কারাগারের প্রথম গেট ভেঙে স্যালুটিং ডায়েস, কারা ক্যান্টিন, বন্দীদের সাক্ষাৎকক্ষ ভাঙচুর করে। কারারক্ষী রাজন মাতুব্বরকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। এক পর্যায়ে তারা প্রধান ফটকের মূল গেট ও অস্ত্রাগার ভাঙার চেষ্টা করে এবং বন্দীদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। হামলাকারীরা একটি স্কুটি ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ১৯ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
টুঙ্গিপাড়ায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মামলা
অপরদিকে, টুঙ্গিপাড়ায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ৮২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই মামলাটি করেন।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন টুঙ্গিপাড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতি জামান পল্লবসহ আরও অনেকে।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোরশেদ আলম জানান, ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে এ মামলার এজাহারভুক্ত ২৩ জনসহ মোট ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগের মামলা ও বর্তমান পরিস্থিতি
এর আগে, গত ১৯ জুলাই রাতে নিহত চার যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি হত্যা মামলা দায়ের করে, যেখানে অজ্ঞাত পাঁচ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া, গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি এবং কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি করে মামলা করা হয়। এই চারটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং দুই হাজার ৬৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ৩১২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। দিনভর হামলায় চারজনের মৃত্যু হয় এবং পরের দিন আরও একজনের মৃত্যু হয়। এরপর ১৮ জুলাই থেকে একাধিকবার ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করা হয়, যা গত ২০ জুলাই প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে এবং হামলাকারী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছে।