জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার না পেলে বিচার শুধুই আনুষ্ঠানিকতা : পরিবেশ উপদেষ্টা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, যদি আমরা দেশকে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে তুলে এনে পরিবর্তন করতে না পারি, তবে বিচার কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়েই থাকবে। এতে করে এমন অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। তাই আনুষ্ঠানিক বিচারের পাশাপাশি রাষ্ট্রকে বদলে দেওয়ার যে দায়িত্ব আমাদের সবার ওপর রয়েছে। দেশের মানুষের যে সত্যিকারের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আছে, সেটাকে সবার গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা ও সম্মান জানানো উচিত।
আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীতে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য সুরক্ষা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার আছে, তা অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে। তিনি জোর দেন, বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই নিয়ম মেনে ও আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করতে হবে। তবে শুধু বিচার করলেই চলবে না, রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়তে হলে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, যদি অপরাধের বিচার না হয়, তাহলে মানুষের বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা কমে যাবে। সরকার এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ও বিচারিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছতা বজায় রেখে সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিচারকাজ যেন নির্ভরযোগ্য ও প্রশ্নহীন হয়, সেজন্য আইনি প্রক্রিয়া কঠোরভাবে মেনে চলা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে এটি নিয়ে কোনো নেতিবাচক আলোচনা না হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন তখনই আসবে যখন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থের বদলে জাতীয় স্বার্থকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মনে করেন, যখন কোনো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায় ও দলীয় সরকারের মুখপত্রে পরিণত হয়, তখনই এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম হয়। রাতারাতি এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়, এজন্য সবাইকে সচেতন থেকে ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তনের পথে কাজ করে যেতে হবে।
উপদেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও নির্দেশদাতারা কীভাবে পালাতে পারল, সেটিরও বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত বেশিরভাগ নির্দেশদাতাই ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালাতে পেরেছে। তাদের পালানোর বিষয়টিও বিচারের আওতায় আসা উচিত। তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার হলে এটি প্রমাণ করে, রাষ্ট্রযন্ত্রের কোথাও না কোথাও এখনো বিচারহীনতার সংস্কৃতি রয়ে গেছে। তার মতে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সমর্থকরা এখনো বিভিন্ন সেক্টরে রয়ে গেছে, না থাকলে খুনিরা পালাতে পারত না।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে বিচার হলেও, তাদের সত্যিকার অর্থে বিচারের মুখোমুখি হতে না পারাটা মেনে নেওয়া যায় না বলে মনে করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রায়ে কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তি সাজা পাবে, তবে বেশির ভাগই শাস্তির বাইরে থেকে যাবে। তাই বিচারের এই দিকটি নিয়ে ভাবতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, গ্রেপ্তার-বাণিজ্য ও মামলা-বাণিজ্য থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি। তিনি রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আশা প্রকাশ করে বলেন, চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের একটি বড় অংশের বিচার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ হবে আগামী ৩ আগস্ট।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের। এছাড়া অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের জন্য দোয়া করা হয় এবং ‘ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ’- শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।