নওগাঁয় হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণ মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন

নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
অপহরণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—মিশু (১৯) ও পিংকি (৩০)। এছাড়া এ মামলায় দুই আসামি হুজাইফা এবং সাজু আহমেদ-এর ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে।
হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুলছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে তার বাবার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন কয়েকজন যুবক। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে পরের দিন আসামিরা নাজমুলকে হত্যা করে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখে। পরে নাজমুলের বাবা বদলগাছী থানায় অভিযোগ করলে তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ দুই আসামি মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদণ্ড দেন বিচারক। একইসঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলার আরও দুই আসামির ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়ায় তাদের ১০ বছর আটকাদেশ দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—মোরশেদ আলী (৩৫) ও রবিউল ইসলাম (৩৮)। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে উপজেলার বালুবাজার গ্রামের মোরশেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আসামি রবিউল ইসলাম ওই মেয়েকে ধর্ষণ করে। এ সময় তিনি মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রেখে দেন। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল ইসলাম বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে আসামি রবিউল ইসলাম মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও পাঠায়। ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি দেখে ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। কিছুদিন পরে ঢাকার বিক্রমপুরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে হলে রবিউল ইসলাম দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও ধর্ষণের ভিডিও পাঠায়। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট দেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মোরশেদ আলী এবং রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে আরেক আসামীর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস প্রদান করেছেন।
উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।