২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি বিবেচনায় এনইসি বৈঠক আজ

পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদনের লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠক আজ রোববার (১৮ মে) অনুষ্ঠিত হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এনইসি চেয়ারপারসন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপির মধ্যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং প্রকল্প ঋণ ও অনুদান হিসেবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী অর্থবছরের খসড়া এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি।
তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭১ কোটি টাকা যুক্ত করলে, আগামী অর্থবছরের জন্য সামগ্রিক এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৯ দশমিক ৭১ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নতুন এডিপি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে প্রণীত হয়েছে।
এছাড়াও নতুন এডিপিতে কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, এবং অঞ্চলভিত্তিক সুষম উন্নয়ন খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রস্তাবিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত পরিবহণ ও যোগাযোগ খাত ৫৮ হাজার ৯৭৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার ৩৯২ দশমিক ২৬ কোটি টাকা (১৪ দশমিক ৮ শতাংশ), শিক্ষা খাত ২৮ হাজার ৫৫৭ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা (১২ দশমিক ৪২ শতাংশ), গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাত ২২ হাজার ৭৭৬ দশমিক ৪০ কোটি টাকা (৯ দশমিক ৯০ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য খাত ১৮ হাজার ১৪৮ দশমিক ১৪ কোটি টাকা (৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ) বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই পাঁচটি খাতে মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ শতাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শীর্ষ ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে, এরপর রয়েছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ ৩২ হাজার ৩২৯ দশমিক ৫৭ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ ২০ হাজার ২৮৩ দশমিক ৬২ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ১৩ হাজার ৬২৫ দশমিক ৩ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ১৫৪ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১১ হাজার ৬১৭ দশমিক ১৭ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৩৯৮ দশমিক ১৬ কোটি টাকা, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৩৮৭ দশমিক ৬২ কোটি টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ৭১৪ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা পাবে।
নতুন এডিপিতে মোট ১ হাজার ১৭০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যার মধ্যে ৯৯২টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১৯টি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প, ৯৯টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ৬০টি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প রয়েছে।
প্রস্তাবিত এডিপিতে ৭৯টি প্রকল্প পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য রাখা হবে এবং ২২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায়।
এছাড়া, নতুন এডিপিতে ২৫৪টি প্রকল্প আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ২০৮টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১১টি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প, ১৬টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ১৯টি সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প।