এনবিআরের অচলাবস্থায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থার কারণে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ আমদানি ও রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। দেশের শীর্ষ ১৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন। তারা এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের অপসারণের দাবির বিরোধিতা করে বলেছেন, এতে সমস্যা আরও বাড়বে।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা একটি দক্ষ ও হয়রানিমুক্ত এনবিআর প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্থাটির সংস্কারের পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তারা বলেন, সব কর্মকর্তা অসৎ নন, তাদের ভবিষ্যতের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রাখা উচিত।
বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশ ও ব্যবসার স্বার্থে সবাইকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। আন্দোলনকারীসহ সব পক্ষের আলোচনায় বিদ্যমান সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
ব্যবসায়ী নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চলমান স্থানীয় এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নানা পরিস্থিতিতে চাপে থাকা ব্যবসায়ীরা নতুন করে এনবিআরের অচলাবস্থার কারণে আরও সমস্যায় পড়েছেন। তারা এই ধরনের 'আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত' থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ীরা বলেন, এনবিআরের এই আন্দোলনের কারণে এখন ব্যবসায়ীদের 'পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে'। তাই কালক্ষেপণ না করে আজকেই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিডার যৌথভাবে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি। তাদের ভবিষ্যৎ ন্যায়সঙ্গত সুরক্ষা এবং দেশের অর্থনীতি যাতে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে।
একই সঙ্গে, তারা আন্দোলনকারীদের দেশের অর্থনীতির স্বার্থে 'কলম বিরতি' ও 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কোনো শর্ত ছাড়া কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, এনবিআরে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা মূলত তাদের টাকা পয়সা বণ্টন নিয়ে সমস্যা। তিনি মন্তব্য করেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা এতোদিন আমাদের (ব্যবসায়ী) জ্বালিয়েছে। এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে। এখন পুরো জাতিকে জ্বালাবে। তিনি দেশের ব্যবসা ও স্বার্থে এসব সমস্যার সমাধান জরুরি বলে উল্লেখ করেন।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের পর হয়তো সংস্থার অন্য কোনো সদস্যের অপসারণের দাবিও উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যা সমস্যা আরও বাড়াবে। তিনি বলেন, যেকোনো দেশের সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের মিথস্ক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এই যোগাযোগ বা সংলাপ কিছুটা স্তিমিত।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর মন্তব্য করেন, যুদ্ধ ছাড়া কোনো দেশের কাস্টমস বন্ধ থাকে, এটা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করবে না। তিনি এনবিআর সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, এনবিআরে অনেক সৎ কর্মকর্তা আছেন, বর্তমান সংস্কারের ফলে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলার অধিকার তাদের আছে। এই বিষয়টি সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।