কুবির সাত শিক্ষার্থী বহিষ্কার

মাদকদ্রব্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, চুরি এবং উগ্র আচরণের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। এর মধ্যে বিজয়-২৪ হলের চারজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং নজরুল হলের এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া চুরির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া বাকি দুই শিক্ষার্থী হলেন- আইন বিভাগের আনাস আহমেদ এবং শামীম ভূঁইয়া।
গতকাল বুধবার (১৪ মে) শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায়, শৃঙ্খলা কমিটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ দেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম।
মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার চার
মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত চারজনই বিজয়-২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত ৬ মে মাদকবিরোধী অভিযানে বিজয়-২৪ হলের তিনটি কক্ষ থেকে মাদক উদ্ধার করা হয় এবং চারজন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে হল প্রশাসন।
বিজয়-২৪ হলের ওই চার শিক্ষার্থী হলেন- কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওয়াসিফুল ইসলাম সাদিফ, লোকপ্রশাসন বিভাগের আরিফ আশহাফ, ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সাইফ হাসান জিদনী এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষার্থী শাকিল খান।
বিজয়-২৪ হলের চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় বিজয়-২৪ হলের চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসা পর্যন্ত তারা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। পাশাপাশি ইতোমধ্যে তাদেরকে হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
গত ৭ মে বিজয়-২৪ হলের প্রভোস্ট ড. মাহমুদুল হাসান খান ঐ চার শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।
উগ্র আচরণে এক শিক্ষার্থীকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার
নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের রাফসান সামির বিরুদ্ধে হলের মধ্যে উগ্র আচরণের অভিযোগ ওঠে।
রাফসান সামিকে কাজী নজরুল ইসলাম হল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে প্রক্টর জানান, ‘হল কমিটির অভিযোগের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে হল থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এমনকি ছয় মাস পর হল প্রশাসন চাইলে তাকে পুনরায় সিট প্রদান করতে পারবে।’
চুরির অভিযোগ সাময়িক বহিষ্কার দুই শিক্ষার্থী
গত ২৫ এপ্রিল আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী আনাস আহমেদ এবং শামীম ভূঁইয়াকে কুমিল্লা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে ক্যামেরার লেন্স চুরি করার অভিযোগ ওঠে। পরে অভিযুক্ত আনাস আহমেদকে ক্যাম্পাসে এসে লাঞ্ছিত করেন বহিরাগত কয়েকজন। পরবর্তীতে বহিরাগতদের দ্বারা লাঞ্ছনার ঘটনায় বহিরাগতদের পুলিশে সোপর্দ করে প্রশাসন। এরপর শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত আনাসের দেওয়া লোকেশন থেকে লেন্স উদ্ধার করে মালিককে হস্তান্তর করে।
শৃঙ্খলা কমিটির অফিস আদেশে বলা হয়েছে, আইন বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের দুই শিক্ষার্থী আনাস আহমেদ এবং শামীম ভূঁইয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত সময়ে তারা একাডেমিক কার্যক্রম ও পরীক্ষা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমনকি হলে অবস্থান এবং ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
অভিযোগকারীরা ক্যাম্পাসে এসে অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে সে বিষয়ে তদন্ত করা দরকার। এর প্রেক্ষিতে ১০৩তম সিন্ডিকেটে একটি তদন্ত কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
তদন্ত কমিটিতে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এছাড়া সদস্য সচিব করা হয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমানকে এবং সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম।