বিশ্ব কিডনি দিবস
শিশুদের কী ধরনের কিডনি রোগ হয়?

আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। কিডনি রোগ প্রতিরোধে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। তিনি ল্যাব এইড স্পেশালাইজড স্পেশালইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৩২২তম পর্বে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়।
urgentPhoto
প্রশ্ন : আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। এই দিবস ঘিরে সারা পৃথিবীতেই সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এই বছর এই দিবসের মূল স্লোগান কী?
উত্তর : এই বছরের স্লোগান হলো চাইল্ডহুড এন্ড কিডনি ডিজিস, এন আর্লি টু প্রিভেন্ট ইট। যদি একে বাংলায় নিয়ে আসি। তাহলে এভাবে বলা যায়- ‘শিশুদের কিডনি রোগ, শুরুতেই প্রতিরোধ’। মানে রোগ হওয়ার আগেই আমরা এর প্রতিরোধের জন্য মনোযোগী হবো।
প্রশ্ন : এই স্লোগানকে এবার গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী? সারা পৃথিবীতে শিশুদের কিডনি রোগ কী বাড়ছে?
উত্তর : আসলে কিডনির রোগই ঝুঁকিপূর্ণ। এ সম্বন্ধে আরো ১০ বছর আগেও চিকিৎসকদের এত ধারণা ছিল না। একবার যদি কারো কিডনি রোগ হয় এর ব্যয় হত বিশাল। যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে প্রায় কিডনি রোগের চিকিৎসা ৫৮ বিলিয়ন ডলার। চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত বেশি এর। কাজেই আমাদের প্রতিরোধের দিকে মনোযোগী হতে হবে। দেখা গেছে যেসব কিডনি রোগ হয় তার বেশির ভাগই শিশুকাল থেকে হয়। আবার গবেষণা করে আরো দেখা গেছে, আমাদের যে জীবন যাপনের ধরন- এগুলো যদি শিশুকাল থেকেই আমরা ঠিক করতে পারি বা সুস্থ জীবন যাপনের অভ্যাস করতে পারি, তাহলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সে জন্যই এই বছর শিশুদের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিশুদের যে কিডনি রোগ আছে সেগুলো আগে ভাগে নির্ণয় করে এর চিকিৎসা করতে হবে।
আবার শিশুদের জীবন যাপনের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, জীবন যাপনের ধরনের সাথে যে রোগগুলো জড়িত আছে সেগুলো যেন বয়স বাড়লে না হয়।
প্রশ্ন : শিশুদের কিডনিতে সাধারণত কী কী ধরনের রোগ হয়?
উত্তর : শিশুদের কিডনিতে কতগুলো রোগ আছে যেগুলো আসলে জন্মগত ভাবেই হয়। কিছু রোগ আছে যেমন বংশগত কারণে হয়। জন্মের সময় হয়তো সমস্যা ছিল না। কিন্তু তার বংশে আছে বলে হয়তো শিশুকাল থেকে সমস্যা হয়েছে। কিছু রোগ আছে যেগুলো বড়দের যেমন হয়,ডায়াবেটিস বা গ্লুমারোন্যাফ্রাইটিস, সেগুলো শিশুদেরও হয়। কিছু নালি আছে যা জন্মগতভাবে সরু হতে পারে। একটা কিডনি অনুপস্থিত থাকতে পারে। অনেক সময় মূত্রনালিতে পর্দা থাকে। অনেক সময় প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবগুলো উল্টো দিক চলে আসে। এগুলো জন্ম থেকে থাকতে পারে। এরপর জন্মের পর যেগুলো থাকতে পারে, বিশেষ করে পলিসিস্টিক কিডনি রোগ হতে পারে। এগুলো বংশগত। এগুলো বয়সের সাথে সাথে কিডনিকে আক্রান্ত করে। এতে এক সময় কিডনি বিকল হয়ে যায়। আরো কিছু জিনিস আছে। দেখবেন, অনেক বাচ্চার চোখমুখ ফুলে যাচ্ছে এবং যদি পরীক্ষা করা হয়, তাহলে হয়তো দেখা যাবে তার প্রচুর অ্যালবুমিন যায়। ত্বকে ইনফেকশনের কারণে ন্যাফ্রাইটিসে বাচ্চারা আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া অনেক সময় বাচ্চাদের ডায়াবেটিস হয়। এসব কারণেও হতে পারে।
এই রোগগুলো যদি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা যায়, অর্থাৎ মাতৃগর্ভ থেকে শনাক্ত করা যায় যে তার নালি চিকন কি না এবং তার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অথবা জন্মের পর পরই অস্ত্রোপচার করে সেগুলো ঠিক করা যেতে পারে। প্রস্রাব উল্টো দিকে চলে যাওয়ার সমস্যা হয় যাদের তাদের যদি ঘন ঘন প্রস্রাব করানো যায়, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, তাহলে সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। এতে কিডনি বিকলের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। যদি পর্দা থাকে নালিতে তাহলে একটি ছোট অস্ত্রোপচার করে ঠিক করা যেতে পারে। অথচ এই রোগের কারণে অসংখ্য রোগী কিডনি বিকল হয়ে আমাদের কাছে চলে আসে।
এসব বিষয় যদি আগে নির্ণয় করা যায় তাহলে ভালো হয়। পাশাপাশি বাচ্চাদের মা বাবা, শিক্ষকরা যেন এই বিষয়ে সচেতন হতে পারে এই বিষয়ে কাজ করা হয়।
প্রশ্ন : আপনারা বাংলাদেশে এই দিবসকে ঘিরে কী কী করছেন?
উত্তর : বাংলাদেশে কিডনি সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন বাংলাদেশে রেনাল অ্যাসোসিয়েশন। কিডনি ফাউন্ডেশন, পেডিয়াট্রিক ন্যাফ্রোয়েট অ্যাসোসিয়েশন। তবে আমি যেহেতু ক্যামস নিয়ে কাজ করি। এর প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি, সেই হিসেবে আমরা এর কাজ বছরের শুরু থেকেই আরম্ভ করে দিয়েছি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা গ্রামে গিয়ে চার হাজার কিডনি রোগী দেখেছি। সেখানে স্ক্রিনিংয়ের সময় আমরা ২৫ শতাংশের ডায়াবেটিস পেয়েছি এবং শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকের প্রস্রাবে অ্যালবুমিন যায়। তারা সেটা জানতই না।
কেবল রক্ত পরীক্ষা করে আমরা দেখেছি ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ লোকের কিডনি আংশিক অকার্যকর আছে। এগুলো আমরা আগে থেকে নির্ণয় করে সেই সাথে লিফলেট দিয়ে মানুষকে জানাতে চেষ্টা করেছি যে জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করলে অনেক ভালো হয়। আমারা জানানোর চেষ্টা করেছি জীবনযাপনের অনেক পরিবর্তন যদি শিশু বয়স থেকে আনা যায় তাহলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
প্রশ্ন : আজকের দিনের জন্য কী করছেন?
উত্তর : আজকের দিনে কয়েকটি অ্যাসোসিয়েশন মিলে যৌথভাবে মিটিং করছি। সেখানে এই সচেতনতা নিয়ে কথা বলা হবে। মিডিয়া যাবে। আজকে বিকেলে শিশু স্কাউটদের নিয়ে আরেকটি প্রোগ্রাম আছে। ওদের আমরা শিক্ষা দেব যে কীভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। ওরা আবার ক্যামসের দূত হিসেবে দেশব্যাপী কাজ করবে। তারা স্কাউটদের শেখাবে। তারা ক্লাসে গিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের শেখাবে। আমরা প্রতিটি স্কুলের বাচ্চার কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে চাই যে কীভাবে চললে কিডনি ভালো রাখা যাবে। শিশুরা শিশুদের শেখাবে।