কুমিল্লার দুই করোনা আইসিইউ ইউনিট অচল, জনবল সংকট

করোনার ভয়াবহতা এখনও ভুলে যায়নি বিশ্ববাসী। তার মাঝেই ফের নতুন রূপে হুমকি হয়ে উঠছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। এমন ভয়ের সময়েই দুঃসংবাদ দিয়েছে কুমিল্লা স্বাস্থ্য বিভাগ। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ এবং আইসোলেশন ইউনিটের ৬০টি বেড পড়ে আছে অযত্নে ও অচল অবস্থায়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এগুলো স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
করোনা মহামারির সময় সরকারি প্রকল্প ‘ইআরপিপি’র আওতায় স্থাপন করা হয়েছিল বিশেষায়িত আইসিইউ ইউনিট। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ৮ মাস ধরে এসব ইউনিট কার্যত অচল। চিকিৎসক-নার্সদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে। অথচ এই ইউনিটেই রয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে এখনও চালু রয়েছে মাত্র ১০টি বেড, যা পরিচালিত হচ্ছে মাত্র একজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স দিয়ে। বাকি বেডগুলো অচল হয়ে আছে।
অসুস্থ স্বজনদের নিয়ে আসা নাগরিকরা অভিযোগ করছেন, জরুরি রোগীর চিকিৎসায় সরকারি আইসিইউ সেবা না পেলে তারা নিদারুণ সংকটে পড়বেন।
কাওসার আলম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, বেড আছে, কিন্তু কোনো কাজে আসছে না। আইসিইউ সচল না থাকলে গরিব মানুষ কোথায় যাবে?
পারভীন নামে এক নারী বলেন, প্রাইভেট হাসপাতালে খরচ বেশি। সরকারিভাবে যদি আইসিইউ বন্ধ থাকে, তাহলে গরিব মানুষ মারা যাবে চিকিৎসার অভাবে।
হাসপাতালে কাজ করা স্টাফ নার্স রোখসানা আক্তার জানান, ইউনিটের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ, মনিটরগুলো অকেজো, এমনকি এসি থেকে পানি পড়ে ছাদ দিয়ে মেঝেতে জমছে, তা ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বালতি ও বল।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, ৩০টি বেডের মধ্যে মাত্র ২০টি চালু আছে। এত বড় জেলার জন্য এটা মোটেও যথেষ্ট নয়। করোনার নতুন প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে, কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নুর মোহাম্মদ বশীর আহমেদ জানান, আইসিইউ ইউনিট সংস্কার ও জনবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন দেখা যাক, কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, করোনার মহামারিতে কুমিল্লায় প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগী আইসিইউতে ভর্তি হন, যাদের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৮০০ জন প্রাণ হারান। সেই ভয়াবহতার স্মৃতি এখনও তাজা। অথচ নতুন করে করোনা ছড়াতে শুরু করলেও প্রস্তুতির অভাব চোখে পড়ছে। কুমিল্লাবাসীর দাবি, ভয়াবহতা শুরুর আগেই সরকার যেন জেলায় স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর দেয়।