সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে আজ শুক্রবার (৬ জুন) বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মানুষ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। চাঁদপুর, জামালপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, মুন্সীগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা আজ ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি করছেন।
চাঁদপুরে সাদ্রা দরবার শরীফের ঐতিহ্য
চাঁদপুর জেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে আজ পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে। হাজীগঞ্জ সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রথম জামাত শুরু হয়, যার ইমামতি করেন দরবারের পীর জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি।
অপরদিকে সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় সকাল ৯টায় নামাজের ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মাওলানা আরিফ চৌধুরী। ১৯২৮ সালে সাদ্রা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক চৌধুরী আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন। প্রায় ৯৬ বছর ধরে চলে আসা এই প্রথায় বর্তমানে অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।

জামালপুরে ২০ গ্রামের ঈদ উদযাপন
জামালপুর জেলার ইসলামপুর, সরিষাবাড়ী ও মাদারগঞ্জ উপজেলার ২০টি গ্রামের দুই হাজারেরও বেশি মুসলমান আজ পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করছেন। ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি পশু কোরবানিও করছেন তারা। এই গ্রামগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে ধর্মীয় উৎসব পালিত হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, হজ, আরাফার দিন ও ঈদুল আজহার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক থাকায় সৌদির তারিখ অনুসরণ করাই উত্তম।

মুন্সীগঞ্জে শত বছরের প্রচলন
মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তত ১৫টি এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়, যার ইমামতি করেন স্থানীয় বাচ্চু মুন্সি। স্থানীয়রা জানান, মুন্সীগঞ্জে অন্তত ১০০ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একই দিনে ঈদ পালনের প্রচলন রয়েছে।

ফরিদপুরে ১২ গ্রামে ঈদের জামাত
ফরিদপুরে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ১২টি গ্রামে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নের চারটি স্থানে সকাল ৯টা, সাড়ে ৯টা ও ১০টায় পর্যায়ক্রমে চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও জেলার আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দিনাজপুরের বিরামপুরে ১৫ গ্রামে ঈদ
দিনাজপুরের বিরামপুরে দুটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মুসল্লিরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। জামাতে পুরুষ ও নারী মুসল্লি উভয়ই অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে তারা পশু কোরবানি করেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়ড়া মাদ্রাসা মাঠে এবং একই সময়ে খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর সুমনের আঙিনায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মাদারীপুরে বড় ঈদের জামাত
মাদারীপুরে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন ২৫ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। জেলার সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের তাল্লুক গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে।

বরিশালে আগাম ঈদ উদযাপন
বরিশাল নগরীসহ জেলার কয়েক হাজার পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদুল আজহা উদযাপন করছে। শুক্রবার সকালে জামায়াত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পশু কোরবানি দেন। বরিশাল নগরীর সাগরদীর তাজকাঠী মিয়াবাড়ী এলাকার জাহাগীরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে কয়েকশ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেন। এছাড়া বরিশাল নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়ার চৌধুরীবাড়ি শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদে সহস্রাধিক পরিবার ঈদের নামাজ আদায় করেছে।

রংপুর বিভাগে ঈদ
রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন গ্রামেও সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়েছে। রংপুর বিভাগীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, লালমনিরহাটে ১৫টি, কুড়িগ্রামে ২৫টি, রংপুরে ২২টি, গাইবান্ধায় ২৮টি এবং নীলফামারীতে ৩০টি গ্রামে ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
এছাড়াও সাতক্ষীরা, পটুয়াখলী, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানরা সৌদি আরবের সঙ্গে সংগতি রেখে একদিন আগে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন, যা বাংলাদেশে ঈদ পালনে একটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।