লড়াই করেও হারল ফ্রান্স, ফাইনালে স্পেন-পর্তুগাল

সেয়ানে সেয়ানে টক্করের পরও ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়ল ফ্রান্স, কিন্তু তারপরও কী অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়াল দলটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লুইস দে লা ফুয়েন্তের দুর্দান্ত স্পেনের বিপক্ষে পেরে উঠল না দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা। ফলে হেরে ফাইনালে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ফরাসিদের, অন্যদিকে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে উঠেছে স্পেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ফিরেছিল ২০২০-২১ মৌসুমের ফাইনাল। তবে সেবার স্প্যানিশদের ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করলেও এবার আর পারল না ফ্রান্স। অপরদিকে ফরাসিদের ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে আরও একবার ফাইনালে উঠে গেল স্প্যানিশরা।
এদিন ম্যাচের ২৩ ও ২৫তম মিনিটে নিকো উইলিয়ামস ও মিকেল মেরিনোর গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্পেন। তবে প্রথমার্ধের পুরোটা আলো কেড়ে নেন স্পেন অধিনায়ক তথা দলটির গোলরক্ষক উনাই সিমোন। ফরাসিদের নিশ্চিত গোল হওয়ার মতো পাঁচটি শট রুখে দেন তিনি।
বিরতির পর নেমে ফের জোড়া ধাক্কা খায় ফ্রান্স। এবারের দুই গোলদাতা লামিন ইয়ামাল ও পেদ্রি। ৫৪তম মিনিটে লামিনকে ফাউল করে পেনাল্টি দিয়ে বসেন ফরাসি ডিফেন্ডার আদ্রিয়েন রাবিও, আর তা থেকে ব্যবধান ৩-০-তে উন্নীত করেন এই কাতালান প্রতিভা। পরের মিনিটে স্পেনের চকিত আক্রমণে চোখে সর্ষে ফুল দেখে ফ্রান্সের ডিফেন্ডাররা। এ সময় নিকো উইলিয়ামসের ড্রিবলের পর বাড়ানো পাস থেকে আরও নিপুণ দক্ষতায় গোল করেন পেদ্রি।
তার পাঁচ মিনিট পর অবশ্য পেনাল্টি পায় ফ্রান্সও এবং তা থেকে প্রথমবার ব্যবধান কমান এমবাপ্পে। তবে ৭৯তম মিনিটে লামিন পঞ্চম গোলটি করলে মনে হচ্ছিল ফ্রান্সের খেলা সেখানেই শেষ। কিন্তু ফুটবল বলে কথা! যেখানে শেষ বলে কিছু নেই।
৭৯তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা রায়ান শেরকির গোলে ব্যবধান কমে দেশমের দলের। এর তিন মিনিট পর এমবাপ্পের কাছে বল যাওয়া রুখতে গিয়ে তা জালে পাঠিয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসেন স্পেনের বদলি হিসেবে নামা ডিফেন্ডার দানি ভিভিয়ান। ৫-৩ গোলে ব্যবধান কমে এলে পায়ের নিচে মাটি পায় ফ্রান্স; আরও জমে ওঠে খেলা।
এরপর যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে আরও একটি গোল করেন রাঁদাল কোলো মুয়ানি, কিন্তু তা সমতায় ফেরার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে খেলা অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে গড়ানোর সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৯০+৬ মিনিটেই শেষ হয়, আর শেষ হাসি হাসে স্পেন।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই লামিন ইয়ামালকে ঠেকাতে গিয়ে বারবার রক্ষণের অপর প্রান্ত দুর্বল করে ফেলে ফ্রান্স, যার সুযোগ নিয়েছেন মিকেল ওইয়ারসাবাল-মেরিনো-উইলিয়ামসরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আটকানো যায়নি স্পেনের অপ্রতিরোধ্য এই যুবাকে। জোড়া গোল করে ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
ম্যাচের প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে স্পেন এগিয়ে থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে সমানে লড়াই করে যাওয়া এবং শেষের অন্তত ২৫ মিনিট একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করলে শেষ পর্যন্ত ৫৩ শতাংশ পজেশন রেখে খেলা শেষ করে ফ্রান্স। পুরো ম্যাচে স্পেনের ১৬টি শটের বিপরীতে ২৪টি শট নেয় দেশমের শিষ্যরা। লক্ষ্যে শট নেওয়ার দিক থেকেও স্পেনের চেয়ে (৮টি) এগিয়ে ছিল ফরাসিরা (৯টি)। তবে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন গোলরক্ষক সিমোন। ম্যাচে মোট ছয়টি সেভ করেছেন তিনি, যেখানে মাইক মাইনিয়ঁর সেভ তিনটি। তাই জয়ের পাল্লা লা রোহাদের দিকেই নেমেছে।
এর মাধ্যমে নেশন্স লিগ শুরু হওয়ার পর থেকে কেবল প্রথম আসর ছাড়া পরের তিনটি আসরেই ফাইনাল খেলার গৌরব অর্জন করল স্পেন, যেখানে প্রথমবার হারলেও পরের বার, অর্থাৎ গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা।
এবার শিরোপা ধরে রাখার মিশনে তাদের সামনে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। এক রাত আগে স্বাগতিক জার্মানিকে ধরাশায়ী করে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোরা। আগামী রোববার (৮ জুন) রাতে মিউনিখের আলিয়ান্স আরেনায় দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে মাঠে নামবে এই দুই দল।