‘চোকার্স’ নাম ঘুচিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা

জয়ের মঞ্চটা গতকালই তৈরি করে রেখেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আজ শনিবার (১৪ জুন) সেটাই সারলেন এইডেন মার্করাম। পূর্ণতা পেল ৩৬ বছরের আক্ষেপ। প্রথমবার কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠলো প্রোটিয়ারা। ঘুচে গেলো ‘চোকার্স’ নামক সেই কটু বাক্যটা। লর্ডসের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে নিজেদের করে নিল ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট।
দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮২ রান তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২১২ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিপরীতে মোটে ১৩৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয় ইনিংসেও ২০৭ রান তুলেছিল অসিরা। এতে তাদের লিড দাঁড়িয়েছিল ২৮১ রানে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই জয় দেখে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, আসলে ছিল তার বিপরীত। লর্ডসে পেসারদের দাপটে যেখানে দাঁড়াতেই পারছিলেন না ব্যাটাররা, সেখানে এই রানকে ধরা হচ্ছিল এভারেস্ট সমান উঁচু। প্রেডিকশন, জয়ের পারসেন্টেজ, ম্যাচের পরিস্থিতি; সব কিছুই ছিল অসিদের পক্ষে। সেসবকে ভুল প্রমাণ করে সেই এভারেস্ট জয় করল প্রোটিয়ারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই জয়ের সর্বাধিনায়ক এইডেন মার্করাম। এই ওপেনারের অসাধারণ ব্যাটিংয়েই জয় পেয়েছে প্রোটিয়ারা। স্টার্ক-কামিন্সদের পেস গোলার সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাট করেছেন তিনি। উপহার দিয়েছেন ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যা এক বিস্ময়কর। ফাইনালে এটিই একমাত্র সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি তো দুরে থাক, চার ইনিংস মিলিয়ে হাফসেঞ্চুরিই হয়েছে মোটে চারটি। সেখানে মার্করামের এই ইনিংসকে বিস্ময়কর বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। শেষ পর্যন্ত ২০৭ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ১৪টি চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস।
তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। এই দুজন মিলেই পার করে দিয়েছিলেন গতকালের দুই সেশন। এনে দিয়েছিলেন জয়ের সুবাশ। বাভুমা সেঞ্চুরি না পেলেও তার অবদানও কম ছিল না মোটেই।
২ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১০২ রানে অপরাজিত ছিলেন মার্করাম আর ৬৫ রানে বাভুমা। জয় থেকে তখন ৬৯ রান দূরে।
কিন্তু আগের দিন মাটি কামড়ে পড়ে থাকা বাভুমা এদিন আর ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না। মোটে এক রান যোগ করেই কামিন্সের বলে অ্যালেক্স ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৩৪ বলে ৬৬ রান।
এরপর মার্করামকে সঙ্গ দিতে আসে ট্রিস্টান স্টাবস। মিডল অর্ডার এই ব্যাটারকে নিয়ে ২৪ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান মার্করাম। স্টার্কের বলে স্টাবস বোল্ড হলে ভাঙে সেই জুটি। তিনি ফেরেন ব্যক্তিগত ৮ রানে।
৬ নম্বরে আসা ডেভিড বেডিংহ্যামকে নিয়ে আরেকটি কার্যকরী জুটি গড়েন ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নামা মার্করাম। পঞ্চম উইকেটে এই জুটি থেকে আসে ৩৫ রান। স্থায়ীত্ব ছিল ৬৬ বল। কিন্তু এবার নিজেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন মার্করাম। জস হ্যালেউডের বলে ক্যাচ দেন ট্রাভিস হেডকে। কাজের কাজ করে দিয়ে ফিরে যান তিনি। তার আগে ২০৭ বলে খেলেন ১৩৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস।
এরপর কেইল ভেরেইন্নাকে নিয়ে বাকি কাজটা সেরে ফেলেন বেডিংহ্যাম। তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ২১ রানে আর ভেরেইন্না ১৩ বলে ৪ রানে।