বুড়িগঙ্গার পানিতে ক্যানসারের জীবাণু, কমেছে অক্সিজেনের পরিমাণ

রাজধানীর প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন প্রাণহীন। বুড়িগঙ্গা ঘিরে বেরিয়ে এসেছে গা শিউরে ওঠার মতো তথ্য। চরম ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গার পানি। সব গুণাগুণ হারিয়ে জলজপ্রাণি ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কমেছে অক্সিজেনের পরিমাণ, বেড়েছে পানিতে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন আয়রনের সক্রিয়তার (পিএইচ) মাত্রা। ধারণ করছে ক্যানসারের জীবাণু। আর অ্যামোনিয়ার পরিমাণও আঁতকে ওঠার মতো। গৃহস্থলীর কাজেও অনুপযোগী এর পানি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে এ সব তথ্য।
গবেষকরা বলছেন, তিনটি কারণে পানিকে নিরাপদ বলা হয়। এর কোনটিই বুড়িগঙ্গার পানিতে নেই। তাঁরা জানান, পানিকে হতে হবে গন্ধহীন, স্বাদহীন ও রংহীন। কিন্তু বুড়িগঙ্গার পানিতে রং, গন্ধ এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তিক্তস্বাদও পাচ্ছেন স্থানীয়রা।
কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, নদীর আশপাশের কলকারখানা, বাসাবাড়ি, নৌযানের নির্গত তেল, রাসায়নিক ও বর্জ্য পদার্থ পানির গুণগত মান নষ্ট করছে। শুধু শ্যামপুর এলাকার ৬৫টি কারখানার বিষাক্ত পদার্থে ভারী হয়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গার পরিবেশ।

বুড়িগঙ্গা নদীতে যুক্ত হওয়া প্রত্যেকটি ড্রেন দিয়ে আসছে ডাইং কারখানার দূষিত পানি। যার প্রভাবে ওই এলাকায় নদীর পানির রঙ কালচে থেকে বেগুনি হয়ে গেছে। বাতাসে ভেসে আসছে দুর্গন্ধ।
গবেষণা বলছে, এই এলাকার পানিতে পিএইচের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। বৃষ্টির মৌসুম আসার আগে পিএইচের মাত্রা থাকে সাত দশমিক ৬ শতাংশ ও বর্ষা মৌসুমে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ছয় দশমিক ৭-এ। বর্ষা চলে গেলে অবস্থান করে ৮-এ। বুড়িগঙ্গার পানিতে টোটাল সাসপেন্ডেবল সলিডসের (টিএসএস) পরিমাণ সময় ভেদে ১০ থেকে বিশগুণ বেশি থাকে।
গবেষণা আরও বলছে, ওই এলাকার পানিতে বিওডি এবং সিওডির পরিমাণ এতোটাই বেশি যে সেখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা মারাত্মক। আর অ্যামোনিয়ার পরিমাণও আঁতকে ওঠার মতো।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘দূষণ এতোটাই মারাত্মক যে বুড়িগঙ্গার পানি গৃহস্থলীর কাজেও ব্যবহারের অনুপযোগী। জলজ প্রাণির জন্য এ পানি সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাছ বেঁচে থাকার জন্যও উপযোগী না।’
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘দূষণ এখনই রোধ করা না গেলে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে।’