নারী নির্যাতনের দায়ে পুলিশ সদস্যের কারাদণ্ড

গোপনে একাধিক বিয়ে করে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধর এবং বটি দিয়ে কুপিয়ে জখমের অভিযোগে করা মামলায় এক পুলিশ সদস্যের দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার (১৮ মে) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক রোকশানা বেগম হেপী আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য হলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পরিবহণ বিভাগের কনস্টেবল মো. মনির হোসেন। তিনি রাজধানীর কদমতলী থানার মেরাজনগরের বাসিন্দা।
রায় ঘোষণার পর আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন মামলার বাদী শিল্পী আক্তার। তিনি বলেন, ‘মনির দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নির্যাতন করেছে, যৌতুক দাবি করেছে। এ ছাড়া গোপনে অন্যত্র বিয়ে করে আমার সংসার শেষ করেছে। তার সাজা হওয়ায় আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।’
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ এক লাখ টাকা মোহরানা ধার্য করে পুলিশ কনস্টেবল মনির হোসেনের সঙ্গে বাদী শিল্পী আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় মনির হোসেন যৌতুকের দাবিতে বাদীকে মারধর করেন। মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ স্বামী মনিরকে ফেরত দেওয়ার শর্তে এক লাখ টাকা প্রদান করেন৷ এ টাকা দিয়ে মনির তার ভাড়া বাসা থেকে অদূরে একটি রিকশা গ্যারেজ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বাদী ধার দেওয়া এক লাখ টাকা ফেরত চাইলে আসামি মনির তাকে মারধর করেন। এরপর প্রায়ই স্ত্রীকে রেখে অন্যত্র রাত্রী যাপন করতেন আসামি। এতে সন্দেহ হলে, বাদী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন আসামি শিউলি বেগম নামে এক নারীকে গোপনে বিয়ে করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর দ্বিতীয় বিয়ের কারণ জানতে চাইলে আসামি বাদীকে মারধর করেন। পরে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর মনির ও অন্যান্য আসামি এবং তার পরিবারের সদস্যরা শিল্পী আক্তারের কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন৷ বাদী যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে আসামি তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে আসামি বাদীকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে আসামি বাদীর মাথায় বটি দিয়ে কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশ পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী বাদীকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় শিল্পী আক্তার বাদী হয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ)/৩০ ধারায় মামলা করেন। মামলায় আসামি ছাড়াও বাদীর শ্বশুর মো. আব্দুর রহমান, ননদ তানিয়া আক্তার ও ভাসুর নাসির হোসেনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত শেষে মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার এস এম শাহীন ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০২০ সালের ৪ মার্চ আসামি মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে অন্য আসামিদের অব্যাহতি দেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে সাতজন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।