৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক মাত্র ৪ জন, দুর্দশায় রোগীরা

পটুয়াখালীর বাউফলে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫টি চিকিৎসক পদের ১১টিই শূন্য। এ উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা চলছে মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে। এতে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক মানুষেরা। কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বাউফল উপজেলায় সরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যায় উন্নীত হয়। প্রান্তিক মানুষের সেবার মান উন্নয়নের জন্য ২০১৩ সালের ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শয্যার হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলে আছেন মাত্র চারজন। গাইনি, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসারসহ ১১ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। শুধু চিকিৎসক সংকট নয়, সহকারী সার্জন, নার্সসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকটও রয়েছে।
হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের বর্হিবিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। একজন মাত্র চিকিৎসক রোগী দেখছেন। রোগীর প্রচুর ভিড় থাকায় হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। চিকিৎসক সাম্মি আক্তার বলেন, তিনি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মানবিক কারণে সকাল থেকেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
শিশু সন্তান নিয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায় থাকা ফাতিমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে শিশু সন্তান নিয়ে অপেক্ষা করছি। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তিন দিন ধরে শিশুটি পেটের পীড়ায় ভুগছে, স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করে সুস্থ্য না হওয়ায় বাধ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও সেবা পাচ্ছি না।’
হাসিনুর বেগম নামে আরেক রোগী বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে উল্টো আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে চিকিৎসক যুথী বলেন, ‘এটি বড় উপজেলা। এখানে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। প্রতিদিন জরুরি বিভাগ ও বর্হিবিভাগে অনেক রোগী আসে। চিকিৎসক সংকট থাকায় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।’
চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বলেন, ‘চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের ভয়াবহ অবস্থা। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেডিকেল অফিসার এনে কোনোরকম সামাল দিচ্ছি। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।’
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা.খালিদুর রহমান মিয়া বলেন, চিকিৎসক সংকটে উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেকোনো মুহূর্তে বিপর্যস্ত হতে পারে জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।