রাজধানীর হাজারীবাগের জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে খুন করে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হাজারীবাগ থানা।

গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া তাদের দেওয়া তথ্য মতে ছিনতাইকৃত দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. নাঈম আহম্মেদ (২০), মো. শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০), মো. শাহীন চৌকিদার (২২), মো. রহিম সরকার (১৯),  নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), মো. আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), মো. আনোয়ার হোসেন (১৯),  মো. শহিদুল ইসলাম (২০) ও মো. আরমান (১৮)।

ডিএমপির গণযোগাযোগ ও মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজ বুধবার (২১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তালেবুর রহমান জানান, নুরুল ইসলাম (২৬) ‘Nurislam Photographer’ নামে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করে বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। গত ১৫ মে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে নূরুল ইসলামের মোবাইলফোনে কল আসে। অজ্ঞাত ব্যক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম পাঠায়। পরের দিন (১৬ মে) সন্ধ্যায় তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করার কথা জানানো হয়। নূরুল ইসলাম তার সহযোগী মো. ইমন ওরফে নুরে আলমসহ মতিঝিলের এজিবি কলোনির বাসা হতে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে।

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আরও জানান, সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সাথে দেখা করে। তারা ঐ ব্যক্তির কথামতো একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা করে। রাত আনুমানিক ৮ এর দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় পৌঁছামাত্র অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলে। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

উপকমিশনার আরও বলেন, নুরুল ইসলামের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অতঃপর ভিকটিম নূরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নূরুল ইসলামের বড় ভাই মো. ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। এরপর মঙ্গলবার ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ঢাকার শংকর ও রায়েরবাজার এবং ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া ও তারাকান্দা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।