ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১৪ গ্রামের লাখো মানুষ

ফেনীর সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু কিছু এলাকা। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বাঁধ ভাঙনে গত ৮ জুলাই (মঙ্গলবার) থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এ দুই উপজেলায় পানি কমলেও নতুন করে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার আংশিক এলাকায় প্লাবন ঘটছে। প্লাবিত ১১৪টি গ্রামের লাখো মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
ফেনীর পরশুরামে বন্যার পানির সঙ্গে আসা সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার (৪৮) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টার দিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রোকেয়া পরশুরাম পৌরসভার মধ্যম সলিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনও পানি রয়েছে। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছানো মানুষজনের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও পানি নামছে ধীরগতিতে। ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা এলাকার আংশিক অংশে এখনও পানি নামেনি। এসব এলাকায় কোথাও হাঁটুসমান পানি, কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় ১ হাজারেরও বেশি মৎস্য ঘের ও পুকুর এবং ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি নামার পরই ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ নিরূপণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ফুলগাজীর উত্তর তারালিয়া এলাকার বাসিন্দা আছমা আক্তার বলেন, ‘ঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ির উঠোনে এখনও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরে থাকা চাল-ডাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পানিতে ভিজে গেছে। আবার টাকা থাকলেও বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ না থাকায় সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না।’
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার জানান, পরশুরাম ও ফুলগাজী অংশে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর অংশে পানি অনেক বেড়েছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে এখনও পানি ঢুকছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম কথা বলেছেন। তিনি আজ শনিবার (১২ জুলাই) ফুলগাজী বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে শুকনো খাবার, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের জন্য আরও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী নৌযানের মাধ্যমে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও মজুত রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ, মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তায় বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।