কীভাবে ব্লগিং থেকে আয় করবেন

আপনার কি লেখার প্রতি আগ্রহ আছে, সৃজনশীল লেখার ধারণাগুলো কি আপনার মনে উঁকি দেয়? যদি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি নিজের লেখার সক্ষমতাকে স্থিতিশীল আয়ের উৎসে পরিণত করতে পারেন। আর সেটা হলো ব্লগ লেখা।
কয়েকবছর আগেও ব্লগিংকে শুধুমাত্র শখ হিসেবে নেয়া হত। বর্তমানে ব্লগিংকে অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জনের একটি কার্যকর উপায় হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনেক লেখক বা ব্লগারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও ব্লগিংকে পূর্ণ বা খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
ব্লগ থেকে অর্থোপার্জনের জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি ব্লগ তৈরি করতে হবে। এরপর নিজের ব্লগকে নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। মানি ব্লগিংয়ের (অর্থ উপার্জনের ব্লগ) জন্য প্রয়োজন কঠোর অধ্যাবসায়, দক্ষতা এবং যথাযথ পরিকল্পনা।
চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে ব্লগিং থেকে আয় করা যায়।
কার্যকরী ব্লগ ব্যবসায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে চাকরি খোঁজা যদি আপনার অপছন্দের বিষয় হয় কিন্তু লেখক হিসাবে আপনি অবাধে কাজ করতে চান, সেক্ষেত্রে ব্লগিং হতে পারে আপনার কাজের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ। আপনি যদি ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে চান তাহলে এটিকে ব্যবসা হিসাবেই গণ্য করুণ। ব্লগিংকে যদি পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে চান তাহলে নিজের আর্থিক সক্ষমতা, লক্ষ্য আর ব্যবসা পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে কিছু অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে কাজ শুরু করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ব্লগের পেছনে আপনার বিনিয়োগ শুরু হতে পারে মাত্র ১০ ডলার (ডোমেইনের মূল্য) থেকে। তবে এটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের মতো নয়, মানি ব্লগিংয়ের জন্য একটি কার্যকর ব্যবসায়িক পরিক্ল্পনার প্রয়োজন হয়।
প্রথমেই আপনার ব্লগের জন্য একটি বাজেট তৈরি করুন। এর মধ্যে অবশ্যই লোগো ডিজাইন, ডোমেইন, হোস্টিং ফি, ব্লগ থিমের মূল্য, প্লাগ-ইন এবং মাসিক ইন্টারনেট ফি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। অনলাইন বা অফলাইনে আপনার বিপণনের কৌশলগুলোর উপর নির্ভর করে ব্লগ বাজেটে ব্রান্ডিং বা বিজ্ঞাপনের ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এরপর আপনি কতটা সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন তা স্থির করুন। অবশেষে আপনার রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) গণনা করুন।
উপার্জনের জন্য যেভাবে ব্লগ তৈরি করবেন
ব্লগ তৈরি করতে অনেক বেশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয়না। আপনার যদি প্রোগ্রামিং সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকে বা একদম নাও থাকে তবুও আপনি আয়ের জন্য ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। প্রযুক্তিবান্ধব ব্যাক্তি না হলেও, কীভাবে আপনি অর্থ উপার্জনের জন্য ব্লগ তৈরি করবেন এই নিবন্ধে আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব।
লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি
দেশীয় লেখকরা অবশ্যই ব্লগ লেখার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য তবে একজন অনাবাসী লেখক হিসেবে আপনিও ব্লগ পোস্ট লিখতে পারেন যদি দক্ষতার সাথে নিজের লেখার মান উন্নয়ন করতে পারেন। আপনার লেখার দক্ষতা উন্নয়নের সর্বোত্তম উপায় হল পড়া এবং লেখা। আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন তত বেশি আপনার ভাষাজ্ঞান বাড়বে এবং আরও শক্তিশালী উপায়ে আপনি শব্দের মাধ্যমে নিজের চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে পারবেন।
এছাড়া, পাঠকদের জন্য তথ্যবহুল ব্লগপোস্ট লেখার ক্ষেত্রে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। আর এজন্য অনলাইন বা অফলাইনে গবেষণা চালিয়ে আপনাকে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক বই এবং মানসম্পন্ন ব্লগপোস্টগুলো পড়তে হবে।
অনলাইন/অফলাইনে টাকা দিয়ে বা বিনামূল্যে বিভিন্ন কোর্সগুলোও গ্রহণ করতে পারেন, যেখানে প্রশিক্ষকরা সৃজনশীল লেখার কার্যকর বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। নিজের ব্যবসায়িক ব্লগ পরিকল্পনার অধীনে যদি আপনার পর্যাপ্ত বাজেট থাকে তাহলে আপনি মানসম্পন্ন লেখক নিয়োগ দিতে পারেন, যারা প্রয়োজন অনুসারে আপনার ব্লগের জন্য লিখবেন।
ব্লগ তৈরি
প্রোগ্রামিং জ্ঞান না থাকা বা টাকা খরচ না করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনি ব্লগ তৈরি করতে পারেন। ব্লগার ডট কম বা ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম এর মতো বেশ কয়েকটি প্লাটফর্ম বিনা খরচে ব্লগ তৈরি করার এই সুবর্ণ সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে ফ্রি ব্লগিং প্লাটফর্মগুলোতে হোস্টিং স্পেস, থিম বা প্লাগ-ইন সীমিত থাকায় এগুলোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
একটি ব্লগ তৈরি করার জন্য আপনি ওয়ার্ডপ্রেস বা দ্রুপালের মতো সিএমএস (কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) বেছে নিতে পারেন। জনপ্রিয় এই সিএমএস প্লাটফর্মগুলো বিনামূল্যে বেশ কিছু থিম ও প্লাগইন সরবরাহ করে থাকে। আর কোনো টাকা খরচ না করেই এই থিম ও প্লাগইনগুলো আপনি নিজের ব্লগে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বিনামূল্যের এই থিম ও প্লাগইনগুলোতে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকায়, নিজের লেখার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে মানি ব্লগের জন্য টাকা দিয়ে থিম কিনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। থিমফরেস্ট ডট নেট এর মতো নামী জায়গা থেকে আপনি আপনার উপযুক্ত থিম কিনতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের পছন্দমতো থিম তৈরি করে নিতে আপনি ডিজাইনারও নিয়োগ করতে পারেন।
ট্রাফিকের সম্ভাব্য উৎস বের করা
ওয়েব ট্রাফিক হল আপনার ব্লগের দর্শক বা শ্রোতা। আপনার ব্লগ তখনই অর্থ উপার্জন করবে যখন কেউ সেখানে থাকা কোনো বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে। দর্শকরাই হল সেই সোনার খনি যাদেরকে আপনি আপনার পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করতে যাচ্ছেন। আর এই ওয়েব ট্রাফিক আপনার ব্লগের প্রাণ অর্থাৎ উপার্জনের উৎস।
অর্থোপার্জনের জন্য আপনার ব্লগের প্রতি দর্শককে আকৃষ্ট করতে হবে। কোন উৎস থেকে আপনি পাঠকদের আপনার ব্লগের দিকে টানতে পারবেন তা বুঝতে হবে। গুগলের মতো কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক পেলে এটিকে বলা হয় ‘অরগ্যানিক’ ট্রাফিক। এটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
অন্যদিকে আপনি যদি আপনার ব্লগে দর্শক টানতে গুগল বা সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অর্থপ্রদানকারী প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন পরিচালনা করেন তাহলে সেটি অর্থ প্রদত্ত ট্রাফিকের আওতায় আসে।
গুগল বা ফেসবুকে প্রচারের ব্যয় সেই নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড/বাক্যাংশের প্রতিযোগীতার ওপর নির্ভর করে যার জন্য আপনি গুগল বা ফেসবুক থেকে দর্শক টানতে চান। নিজের ব্লগ ব্যবসায়ের পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে আপনি অরগ্যানিক বা অর্থ প্রদত্ত উৎস বেছে নিতে পারেন।