১০ তরুণ নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য যাত্রা

কখনো চায়ের কাপে গল্প হচ্ছিল, কখনো লাঞ্চের ফাঁকে মাথার ভেতর ঘুরছিল একটাই কথা—‘জীবনে অন্তত একটা সিনেমা তো বানাতেই হবে।’ কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। দিনের পর দিন আটকে থাকা করপোরেট চাকরির শৃঙ্খল, মাঝে মাঝে নিজের আলসেমিও, স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে হয়ে উঠছিল স্তব্ধ।
কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেন ১০ জন তরুণ নির্মাতা—তাঁরা আর বসে থাকবেন না। জীবনকে একটু সময় দেবে, ক্যামেরা ধরবে, গল্প বলবে। খুব বড় কিছু না, ছোট করে, নিজেরা মিলে, নিজেদের গল্প বলবে।
গত শুক্রবার সেই স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ ছিল। রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হলো ‘ফ্রেন্ডলি নেইবারহুড ফিল্মমেকারস’-এর ব্যানারে ১০ জন নির্মাতার ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার একসঙ্গে প্রদর্শনী।
যেসব স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রদর্শিত হয়েছে
‘হুদাই মিস’ – জাহিদুল হক অপু
দুই আগন্তুকের হঠাৎ দেখা, ভুল সময়ে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত, আর হারিয়ে যাওয়া জীবনের সম্ভাবনা—সব মিলে এক অনুচ্চারিত হাহাকার।
‘হামাংকুলাস’ – ইবনে নূর রাকিব
প্রতিবিম্বহীন এক শহরে এক তরুণী আবিষ্কার করে, তারই মতো দেখতে কেউ তার পেছনে ছায়ার মতো ঘুরছে। বাস্তব-অবাস্তবের মাঝে এক ভয়াল মানসচিত্র।
‘সোলমেট’ – আদেল ইমাম অনুপ
যে মানুষ একসময় জীবনসঙ্গী ছিলেন, সাফল্যের পর হয়ে যান বোঝা—এ এক নির্মম ব্যঙ্গ রাজনীতি আর সম্পর্কের ওপর।
‘চা চাই’ – শেখ কোরাশানী
চা বানাতে বানাতে ক্লান্ত এক স্বামী, আর চা–তে না মেটা এক স্ত্রীর তৃষ্ণা। আধো হাস্যরসের মোড়কে একটি সম্পর্কের ভেতরকার অতৃপ্তির গল্প।
‘তেলাপোকা’ – আল-আমিন হাসান নির্ঝর
ছোট ছোট কথোপকথনের মধ্যে ফুটে ওঠে সমাজের ভণ্ডামি। আমরা যাদের সমালোচনা করি, নিজেরাই কি সেই দোষে দুষ্ট নই?
‘লোক’ – মাহমুদা সুলতানা রীমা
পুরুষশূন্য হয়ে উঠছে একটি গ্রাম। সন্দেহ, ভয় আর বিশ্বাসঘাতকতার গল্প ‘লোক’—যেখানে ডাইনি বলে চিহ্নিত এক নারী হয়ে উঠেছেন প্রতীকময়।
‘ইন অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’ – কনক খন্দকার
প্রতিবাদের ক্লিক, শেয়ারের ঝড়—কিন্তু বাস্তবে? এক তরুণ আবিষ্কার করে যে ঘটনাটি সে শেয়ার করেছে, সেটি তার চারপাশেই ঘটছে।
‘ফর সেল’ – ফজলে রাব্বি
গানের স্বপ্নে বিভোর এক তরুণ, প্যাশনের কাছে বারবার হারে বাস্তবতার কাছে। এক কনসার্টের সুযোগ হারিয়ে গেলে সে নিজের অস্তিত্বকেই প্রশ্ন করতে শুরু করে।
‘অন দ্য কন্ট্রারি’ – ইমতিয়াজ হোসেন
সিনেমা প্রদর্শনের দিনই নিজেকে আবিষ্কার করেন এক নির্মাতা—আত্মসমালোচনার, অহংকারের ও নির্মোহ সত্যের মুখোমুখি হয়ে।
‘ইশপাইট’ – আবীর ফেরদৌস মুখর
শ্রমজীবী এক দম্পতির পথচলা—গল্প, হাসি, ক্লান্তি আর টুকরো ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এক সাদামাটা কিন্তু গভীর সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি।
তরুণদের স্বপ্নযাত্রার পেছনের ভাবনা
এই সিনেমাগুলোর পেছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই পেশাগত জীবনে ব্যস্ত। কেউ কাজ করেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়, কেউ শিক্ষকতা করেন, কেউ চাকরিজীবী। তবুও সিনেমা তাঁদের রক্তে, চেতনায়।
ফ্রেন্ডলি নেইবারহুড ফিল্মমেকারস টিমের পক্ষ থেকে মুখপাত্র শেখ কোরাশানী বলেন,‘এমন অনেকে আছেন, চাকরি করলেও যাঁদের মনে সিনেমা বানানোর স্বপ্ন। চায়ের ব্রেকে, লাঞ্চ টাইমে শুধু একটাই আলোচনা—জীবনে অন্তত একটা সিনেমা বানাব। অবশেষে আমরা নিজেরাই বুঝলাম, শুরু না করলে কখনোই বানানো হবে না। শর্টফিল্ম দিয়েই শুরু হোক।’
তিনি আরও বলেন,‘এক বন্ধু একটা কথা বলেছিল—কোনো একদিন বিরিয়ানি খাব বলে যদি মাসজুড়ে না খাই, তাহলে কি চলবে? তাই ভাত-ডাল দিয়ে শুরু করতে হলো।’
এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে তাঁদের পাশে ছিল কসমেটিকা ঢাকা, যারা পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এসেছিল।