Skip to main content
NTV Online

মত-দ্বিমত

মত-দ্বিমত
  • অ ফ A
  • প্রতিক্রিয়া
  • সমসাময়িক
  • বহির্বিশ্ব
  • ব্যঙ্গ রঙ্গে
  • ফিরে দেখা
  • স্মরণ
  • বিদেশি কলাম
  • নগর দর্পণ
  • অতিথি কলাম
  • খেলাধুলা
  • পাঠকের কলাম
  • বিবিধ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • মত-দ্বিমত
ছবি

একান্তে তাহসান-রোজা

মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর ৫ খাবার

মেট গালা ফ্যাশনে দ্যুতি ছড়ালেন কিয়ারা

গ্রীষ্মের ফুলে ভিন্নরূপে রাজধানীর প্রকৃতি

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা

বিমান বাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার

পুলিশ সপ্তাহ শুরু

স্টাইলিশ মিম

পোপের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ড. ইউনূস

ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠান

ভিডিও
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৬৪
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৪৮
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৪৮
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৪ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৪ (সরাসরি)
নাটক : তোমার সাথে থাকতে চাই
নাটক : তোমার সাথে থাকতে চাই
এই সময় : পর্ব ৩৮১৪
এই সময় : পর্ব ৩৮১৪
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৩
ফাউল জামাই : পর্ব ৮৯
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আপডেট: ১৩:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৫
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আপডেট: ১৩:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৫
আরও খবর
সাদাসিধে কথা: লেখাপড়া নিয়ে কিছু কথা

সাদাসিধে কথা

একটি সুররিয়াল অভিজ্ঞতা

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আপডেট: ১৩:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৫
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
০০:১২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
আপডেট: ১৩:৪৯, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

৩০ আগস্ট দিনটি যে অন্যরকম একটি দিন হবে সেদিন সকালবেলা আমি সেটি একেবারেই অনুমান করতে পারিনি। ভাইস চ্যান্সেলরকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রায় চার মাস থেকে আন্দোলন করছেন। খুবই নিরামিষ ধরনের আন্দোলন; নিজেদের পদ থেকে পদত্যাগ করে সিড়ির ওপর তারা চুপচাপ বসে থাকেন। এ দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকবার ভাইস চ্যান্সেলরকে সরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন হয়েছে। খুব দ্রুত ফল পাবার জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়, ভাইস চ্যান্সেলরের বাসার পানি ইলেকট্রিসিটির লাইন কেটে দেওয়া হয় এবং তাকে ঘরের ভেতর আটকে রেখে দেয়া হয়। বিষয়টা অমানবিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম একটা ঘটনার সমালোচনা করে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম বলে আমার সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের অনেক গালমন্দ শুনতে হয়েছিল। যাই হোক, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার ভেতর গেলেন না। ভাইস চ্যান্সেলর কথা দিয়েছেন দুই মাস পরে নিজে থেকে চলে যাবেন সেটা বিশ্বাস করে অপেক্ষা করতে থাকলেন এবং দুই মাস পরে আবিষ্কার করলেন “কেউ কথা রাখে না!” কাজেই তারা প্রতিবাদ করে সিঁড়ির ওপর বসে থাকেন এবং মাঝে মাঝে গরম বক্তৃতা দেন।

৩০ আগস্ট সিড়ির ওপর বসে থাকতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করলেন, সেখানে প্রায় ভোররাত থেকে ছাত্রলীগের ছেলেরা বসে আছে। শিক্ষক হয়ে তারা তো আর ছাত্রদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে পারেন না তাই ব্যানারটা হাতে নিয়ে রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে রইলেন। ভোরবেলা যেহেতু অন্য শিক্ষকেরা আসতে পারবেন না, তাই কী হয় দেখার জন্য আমি তাদের সাথে গিয়ে ফ্ল্যাগ পোস্টের বেদিতে বসে রইলাম।

ছাত্রলীগের ছেলেরা স্লোগান দিতে লাগল, 'জয় বাংলা', স্লোগানটা শুনতে আমার ভালোই লাগে। কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলরের কিছু হলে তারা কীভাবে আগুন জ্বালিয়ে দেবে কিংবা আন্দোলনরত শিক্ষকদের জামাতের দালাল বলে গালি দিয়ে কীভাবে তাদের হুশিয়ার করে দেয়া হবে সেই স্লোগানগুলো শুনে আমি একটু অস্বস্তি অনুভব করছিলাম। তবে আমি কোনো দুশ্চিন্তা অনুভব করিনি। কারণ প্রচুর পুলিশ আছে। তার চেয়েও বড় কথা প্রক্টর আছেন, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা আছেন, ভাইস চ্যান্সেলরের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন সে রকম বড় বড় শিক্ষকেরা আছেন। এতো জন সব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকদের সামনে ছাত্রলীগের ছেলেরা নিশ্চয়ই আর যাই করুক শিক্ষকদের উপর হামলা করবে না।

আমি মোটামুটি নিশ্চিন্ত মনে বেদীর উপর বসে একটা কাগজ বের করে একটা চিঠি লিখতে বসেছি। অনেক দিন থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম আমাদের শিক্ষামন্ত্রীকে একটা ব্যক্তিগত চিঠি লিখব, সেখানে তাকে বলব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা মেটানোর জন্য তিনি যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে শলা পরামর্শ করেছেন সেই কাজটি ঠিক হয়নি। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেদিন থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের কথা শুনে পরিচালনা করা শুরু হয় মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় সেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যু ঘটে যায়।

আমি যখন চিঠির আধাআধি লিখেছি তখন হঠাৎ ছাত্রলীগের ছেলেদের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম। উত্তেজনার কারণটা বোঝার জন্য আমি রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইস চ্যান্সেলরের গাড়ী থেমেছে, তিনি গাড়ী থেকে বের হলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা ব্যানার হাতে পথ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সাথে কথা বলার কোনো চেষ্টা না করে তিনি পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলেন। তার চারপাশে অসংখ্য ছাত্রলীগের কর্মী, তারা রীতিমতো কমান্ডো স্টাইলে অল্প কয়জন শিক্ষকদের উড়িয়ে দিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরকে বিল্ডিংয়ের ভেতর নিয়ে গেল। এক ধরনের হুটোপুটি হই চই চেচামেচি কী হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা এবং অন্য সবাই চুপচাপ দাড়িয়ে পুরো ব্যাপারটি ঘটতে দিলেন। অল্প কয়জন বয়স্ক শিক্ষক, তার মাঝে মহিলাও আছেন, তাদের হামলা করেছে অসংখ্য কমবয়সী তরুণ। পুলিশ ছোটাছুটি করছে কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই তাদের উপর আদেশ দেওয়া আছে ছাত্রলীগকে তাদের কমান্ডো মিশনকে সফল করতে দিতে, তারা সেটা করতে দিলেন।

আমি পাথরের মতো বসে থেকে পুরো ব্যাপারটি দেখলাম। কোনো সাংবাদিক বা টেলিভিশন ক্যামেরা নেই। ছাত্রলীগের ছেলেরা সেই সুযোগটি গ্রহণ করল। তারা এবারে শিক্ষকদের হাত থেকে ব্যানারটি কেড়ে নিতে তাদের উপর হামলা করল। অল্প কয়জন বয়স্ক শিক্ষক, অসংখ্য তেজি ছাত্রলীগের সাথে কেমন করে পারবেন? তারা শিক্ষকদের নাস্তানাবুদ করে ব্যানার কেড়ে নিল। আমার কাছে মনে হলো, আমি একটি সুররিয়াল দৃশ্য দেখছি, এর মাঝে কোনটি বাস্তব, কোনটি পরাবাস্তব এবং কোনটি অবাস্তব আমি আলাদা করতে পারছি না।

দীর্ঘ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষকদের উপর হামলা করে গেল এবং বলা যায় আমি তখন আমার জীবনের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি দেখতে পেলাম। ছাত্রদের হাতে শিক্ষকদের নিগৃহীত হওয়ার দৃশ্যটি নিশ্চয় অত্যন্ত চমকপ্রদ। কারণ প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা এবং অন্য শিক্ষকেরা একবারও ছাত্রদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন না। আমি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে দেখলাম মানুষ যেভাবে সার্কাস দেখে তারা সবাই ঘুরে ঘুরে সেই সার্কাসটি দেখে গেলেন।

এ শিক্ষকরা কেউ কিন্তু আমাদের দূরের মানুষ নন। তারা সবাই আমার খুব কাছের মানুষ। আমরা দীর্ঘদিন পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করেছি, গণিত অলিম্পিয়াড করতে সারা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি, এক গাড়ীতে করে ঢাকা গিয়েছি, ফিরে এসেছি, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে পড়েছি। জামায়াত বিএনপির দুঃসহ সময়ে আমরা টুইসডে আড্ডার প্রচলন করেছি, সেখানে একসাথে রাজা উজির মেরেছি। আমাদের আপনজন অসুস্থ হলে তারা হাসপাতালে দিনের পর দিন বসে থেকেছে। তাদের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে আমরা তাকে দেখতে গিয়েছি। ছেলে মেয়ের বিয়েতে গিয়েছি। এখন তারা অনেক দূরের মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদের সঙ্গে দেখা হলে তারা না দেখার ভান করে চলে যান। আগে হোক পরে হোক বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর একদিন চলে যাবেন, আমরা সব শিক্ষকেরা থাকব। আমাদের ভেতরে যে বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেই দূরত্ব নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেমন করে চলবে?

খবর পেয়ে এক সময় সাংবাদিকেরা টেলিভিশন ক্যামেরা নিয়ে আসতে শুরু করলেন। ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে। ছাত্রলীগের ছেলেদের স্লোগান ছাড়া আর কিছু নেই। ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা তাদের ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা জানালেন। স্লোগানের কারণে সেগুলোও চাপা পড়ার উপক্রম হলো। আমি তখনও একই জায়গায় বসে আছি। মাঝে মাঝেই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি আমার খুব প্রিয়, আমি চুপচাপ সেই বৃষ্টিতে বসে রইলাম। কী করব বুঝতে পারছি না! সাংবাদিকেরা ঘুরেফিরে কাছে এসে আমার বক্তব্য শুনতে চাইলেন। আমি তাদের বললাম, আমার বলার কিছু নেই। আমি শুধু একজন দর্শক। শিক্ষকদের এ আন্দোলনে আমার কোনো ভূমিকা নেই, তাদের জন্যে সহমর্মিতা জানানো ছাড়া আমি কিছু করিনি। তারপরও সাংবাদিকেরা ঘুরেফিরে আমার কাছে ফিরে এলেন। বললেন, "আপনি এখানে বসে থেকে সব দেখেছেন। আপনার কিছু একটা বলতে হবে।" আমি বাধ্য হয়ে তখন তাদের সাথে কথা বললাম, যতদূর মনে পড়ে শেষ বাক্যটি ছিল এ রকম, "আমি আজকে যাদের দেখেছি, তাদের একজনও যদি সত্যি সত্যি আমাদের ছাত্র হয়ে থাকে তাহলে আমাদের গলায় দড়ি দেওয়া উচিত।" আমার এ কথাটির কারণে অনেকেই মনে খুব কষ্ট পেয়েছেন। এখন বুঝতে পারছি এ রকম একটি কঠিন কথা বলা মোটেই ঠিক হয়নি।

সারাটি দিন খুব মন খারাপ ছিল। আমাদের নিজেদের ছাত্ররা তাদের শিক্ষকের ওপর এভাবে হামলা করবে এটি আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনও বিশ্বাস করতাম না। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বোঝালাম, এ হৃদয়বিদারক ঘটনার হয়তো একটা ভালো দিক আছে। আন্দোলন করা শিক্ষকরা যে বিষয়টা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, সেটি এখন নিজে থেকে প্রমাণিত হয়ে গেল। যখন সবাই দেখবেন একজন ভাইস চ্যান্সেলর তার চেয়ারে বসে থাকা নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগের মাস্তানদের দিয়ে তাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করান, তখন সবাই নিশ্চয়ই আসল ব্যাপারটা বুঝে ফেলবেন। সরকার নিশ্চয়ই এ রকম একজন ভাইস চ্যান্সেলরকে দায়িত্বে রাখতে চাইবে না। আন্দোলনরত শিক্ষকরা যেটি চাইছেন, স্বাভাবিকভাবেই সেটি ঘটে যাবে।

মজার ব্যাপার হলো, আমি প্রথমে খবর পেলাম ভাইস চ্যান্সেলর হামলাকারী ছাত্রদের ধন্যবাদ জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য। আমার জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। খবর পেলাম, শিক্ষামন্ত্রী কোনো একটা সভায় ছাত্রলীগ কর্মীদের আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, ভাইস চ্যান্সেলরের ওপর শিক্ষকদের হামলা করার কাজটি মোটেও উচিত হয়নি। শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। এ দেশের একজন শিক্ষামন্ত্রী সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন, অসংখ্য মারমুখো ছাত্রলীগ কর্মীর মাঝখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বয়স্ক শিক্ষক-শিক্ষিকার পক্ষে ভাইস চ্যান্সেলরের ওপর হামলা করা সম্ভব! শিক্ষামন্ত্রীর কথা শুনে আমি কি হাসব, নাকি গলা ছেড়ে কাঁদব বুঝতে পারিনি।

দেশের একজন শিক্ষামন্ত্রী কীভাবে এ রকম আজগুবি একটা বিষয় বিশ্বাস করতে পারেন, সেটা অবশ্যি আমি পরদিন ভোরবেলাতেই বুঝতে পেরেছিলাম। অনলাইনে খবরটি নিশ্চয় আগেই ছাপা হয়েছে আমি দেখিনি। সারাদেশের সব পত্রপত্রিকা যখন ছাত্রলীগের এ হামলার নিন্দা করে খবর ছাপিয়েছে, সব টিভি চ্যানেল যখন খুব গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রচার করেছে, তখন প্রথম আলো তাদের খবরের শিরোনাম করেছে এভাবে "ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক এবং শিক্ষকের হাতে উপাচার্য লাঞ্ছিত।" প্রথম আলো এ দেশের মূলধারার পত্রিকা। এ দেশের মূলধারার অনেক মানুষ এ পত্রিকা পড়েন। তাদের সার্কুলেশন বিশাল। কাজেই ঘটনার পরদিন বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ জেনে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতই নিকৃষ্ট শ্রেণীর প্রজাতি যে, তারা ভাইস চ্যান্সেলরকে লাঞ্ছনা করতে সংকোচ বোধ করেন না। প্রথম আলোর ইতিহাসে এই প্রথমবার ছাত্রলীগের দুষ্কর্মের বর্ণনা "হা-বিতং" করে ছাপা হলো না!

মনে আছে, আমি তখন মনে মনে খুব লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম। কারণ সত্যিকারের ঘটনাটি যখন ঘটে তখন সেখানে কোনো সাংবাদিক বা টেলিভিশন ক্যামেরা ছিল না। কাজেই যার যা ইচ্ছা তাই বলতে পারবে, আর সে কথা বিশ্বাস করে যার যা ইচ্ছা তাই লিখে বসে থাকতে পারবে। ঘটনার প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই। অন্যায় কিছু ঘটলে সংবাদপত্রের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করা হয়। একটা সংবাদপত্র যখন অন্যায় করে তখন হঠাৎ তার প্রতিবাদ করার কোনো জায়গা থাকে না!

"ধর্মের কল বাতাসে নড়ে" বলে একটা কথা আছে। আমি কথাটাকে আগে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু হঠাৎ দেখতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মের কলটি বাতাসে নড়তে শুরু করেছে। কয়েক বছর আগে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জায়গায় সিসি টিভি বসিয়েছিলাম। তার ফুটেজ বের করে আমরা হঠাৎ সেখানে পুরো ঘটনার একটা ভিডিও পেয়ে গেলাম। সেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে দেখা গেল ছাত্রলীগ কর্মীরা একজন অধ্যাপকের দুই হাত ধরে রেখেছে এবং স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর সেই অধ্যাপকের কলার ধরে ধাক্কাধাক্কি করছেন। শুধু তাই নয়; সেই অধ্যাপককে ছাত্রলীগের ছেলেরা আক্ষরিক অর্থে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে এবং আরেকজন শিক্ষক সময়মতো তার মাথাটা ধরে না ফেললে কী হতো আমরা এখনও জানি না! সিসিটিভির সেই ফুটেজ কতজন দেখেছেন, জানা নেই। শিক্ষামন্ত্রী দেখার সুযোগ পেয়েছেন কি-না কিংবা দেখে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্পর্কে তার মনোভাবের পরিবর্তন করেছেন কী না আমার জানার কৌতূহল ছিল!

ভাইস চ্যান্সেলর শুরুতে ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তদের সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রশংসা করে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তাদের সরাসরি আগাছা হিসেবে উপড়ে ফেলার পরামর্শ দিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তিনজনকে বহিষ্কার করল। চক্ষুলজ্জার খাতিরে ভাইস চ্যান্সেলরও চারজনকে বহিষ্কার করলেন। (তারা অবশ্য নিয়মিত পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে)। দেশের কাছে অন্তত একটি বিষয় জানানো সম্ভব হলো, সত্যি সত্যি ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছিল।

আমার একটিই প্রশ্ন, "কেন করেছিল?" মজার ব্যাপার হলো, সেটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। ছাত্রলীগের ছেলেরা ঘোরতর অন্যায় করেছিল, তাদের শাস্তি দিতে হবে, সেটাই হয়ে গেল মূল বিষয়। শিক্ষকদের এ নিরামিষ ধরনের গান্ধীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে আমি সেভাবে যুক্ত ছিলাম না। শুধু একদিন দূর থেকে বসে দেখার চেষ্টা করে সারাজীবনের জন্য একটা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছি। আমার বাসায় টেলিভিশন নেই, আমি ফেসবুক করি না। কাজেই বিষয়টি নিয়ে কী ধরনের আলোড়ন হয়েছে আমি জানি না। কিন্তু পরদিন ঢাকা থেকে অনেককেই সিলেটে চলে আসতে দেখে একটু আঁচ করতে পেরেছিলাম। সাংবাদিকরা আমার পিছু ছাড়েন না এবং আমি তোতা পাখির মতো শুধু একটা কথাই বলে গেছি, ছাত্রলীগের কর্মীরা যে অন্যায় করেছে, তার থেকে একশ' গুণ বেশি অন্যায় করেছেন যারা তাদের ব্যবহার করেছেন তারা। কাজেই মূল অপরাধীর শাস্তি না দিয়ে শুধু ছাত্রলীগের ছেলেদের শাস্তি দিলে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি দেওয়া হবে না। আমি মোটামুটি বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলাম, পেছন থেকে গডফাদাররা কী করেছে সেটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। সামনাসামনি লাঠিয়াল বাহিনী কী করেছে সেটি নিয়ে সবার একমাত্র মাথাব্যথা।

যাই হোক, এ নিরামিষ আন্দোলনে শিক্ষকরা যেহেতু কখনোই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করেননি; তাই ছাত্ররা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সে কারণে তাদের সেটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু যখন শিক্ষকরা ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হলেন তারা হঠাৎ নড়েচড়ে বসেছে। একজন ছাত্র কখনোই তার শিক্ষকের অপমান সহ্য করে না। কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বের হয়ে এসেছে। তারা কী করবে আমাদের জানা নেই। তাই সামনের দিনগুলোতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কপালে কী আছে আমরা কেউ জানি না।

শুধু একটা বিষয় জানি, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দলের নানা মতের শিক্ষকেরা পাশাপাশি থাকতেন, এখন তাদের ভেতর যোজন যোজন দূরত্ব। আমি কখনোই এ রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখিনি!

২.
৩০ আগস্ট যখন ছাত্রলীগের ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে আমি তখন হতবাক হয়ে কাছাকাছি একটা জায়গায় বসেছিলাম। মাঝেমধ্যে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হয়েছে। আমি একা একা সেই বৃষ্টিতে বসে থেকেছি। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রতিবাদ করার সময় আমি একদিন শহীদ মিনারে বসে ছিলাম। সেদিনও এভাবে বৃষ্টি হয়েছিল। আমি বৃষ্টিকে ভালোবাসি, তাই মনে হয় বৃষ্টিও আমাকে ভালোবাসে। যাই হোক আমার সেই একাকী বৃষ্টিতে ভিজে ঝড়ো-কাক হয়ে থাকার ছবিটি মনে হয় ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে এবং কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সবার মনে খুব দাগ কেটেছে। ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেও আমার সেই বিপর্যস্ত ভঙ্গিতে বসে থাকার ছবিটি ছাপা হয়েছে এবং সত্যি কথা বলতে কি, সেই ছবি দেখে আমি নিজেও চমকে উঠেছিলাম!

এরপর আমি সারাদেশের অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে সমবেদনার সাড়া পেয়েছি। আমি জানি, আমি অসংখ্য মানুষের চক্ষুশূল, সেটি আমাকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করে না। কারণ আমি তাদের বিপরীতে এই দেশের অসংখ্য মানুষ - বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং শিশু-কিশোরের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি তাদের সবাইকে জানাতে চাই, এই দেশ, দেশের মানুষ নিয়ে আমার ভেতরে কোনো হতাশা নেই। আমি মোটেও হতোদ্যম নই, আমি নিজেকে কখনোই পরাজিত একজন মানুষ ভাবি না। আমার সেই বিপর্যস্ত ঝড়ো কাকের ছবি দেখে কেউ যেন ভুল না বোঝে!

বেঁচে থাকতে হলে মাঝেমধ্যে ঝড়ঝাপটা সইতে হয়। কিন্তু সেই ঝড়ঝাপটার কারণে একজন মানুষ কখনও ভেঙে পড়ে না! কী কারণ জানা নেই, আমি এ দেশের অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সেই ভালোবাসা আমি কীভাবে তাদের ফিরিয়ে দেব ভেবে কূল পাই না!

আমার মনে হয় না, এই বাংলাদেশে আমার চাইতে আশাবাদী কেউ আছে, কিংবা আমার চাইতে আনন্দে কেউ আছেন!

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
৮.৯.১৫

 
সাদাসিধে কথা

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেন ভয় পায় তারকারা?
  2. মঞ্চে উঠেই অজ্ঞান, হাসপাতালে ভর্তি বিশাল
  3. ভারতের হামলায় উচ্ছ্বসিত বলিউড, পাকিস্তানের তারকারা বলছেন ‘কাপুরুষতা’
  4. মেট গালায় শাহরুখকে চিনলেন না উপস্থাপক, কিং খান নিজেই দিলেন পরিচয়
  5. আমরা গান চুরি করেছি, গল্প চুরি করেছি : নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি
  6. বলিউডে সিন্ডিকেটের ইঙ্গিত করে কাঁদলেন বাবিল
সর্বাধিক পঠিত

সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেন ভয় পায় তারকারা?

মঞ্চে উঠেই অজ্ঞান, হাসপাতালে ভর্তি বিশাল

ভারতের হামলায় উচ্ছ্বসিত বলিউড, পাকিস্তানের তারকারা বলছেন ‘কাপুরুষতা’

মেট গালায় শাহরুখকে চিনলেন না উপস্থাপক, কিং খান নিজেই দিলেন পরিচয়

আমরা গান চুরি করেছি, গল্প চুরি করেছি : নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি

ভিডিও
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮০
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ০৩
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৪ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৪ (সরাসরি)
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৬৪
ফাউল জামাই : পর্ব ৮৯
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৪৮
দরসে হাদিস : পর্ব ৬৪৮
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
গানের বাজার, পর্ব ২৩২
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
এ লগন গান শোনাবার : পর্ব ২০৫
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১০

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x