Skip to main content
NTV Online

মত-দ্বিমত

মত-দ্বিমত
  • অ ফ A
  • প্রতিক্রিয়া
  • সমসাময়িক
  • বহির্বিশ্ব
  • ব্যঙ্গ রঙ্গে
  • ফিরে দেখা
  • স্মরণ
  • বিদেশি কলাম
  • নগর দর্পণ
  • অতিথি কলাম
  • খেলাধুলা
  • পাঠকের কলাম
  • বিবিধ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
  • বাংলাদেশ
  • বিশ্ব
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • শিক্ষা
  • মত-দ্বিমত
  • শিল্প ও সাহিত্য
  • জীবনধারা
  • স্বাস্থ্য
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  • ভ্রমণ
  • ধর্ম ও জীবন
  • নির্বাচন
  • সহজ ইংরেজি
  • প্রিয় প্রবাসী
  • আইন-কানুন
  • চাকরি চাই
  • অটোমোবাইল
  • হাস্যরস
  • শিশু-কিশোর
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • English Version
  • এনটিভি বাজার
  • এনটিভি কানেক্ট
  • যোগাযোগ
  • English Version
  • এনটিভি ইউরোপ
  • এনটিভি অস্ট্রেলিয়া
  • এনটিভি ইউএই
  • এনটিভি মালয়েশিয়া
  • এনটিভি কানেক্ট
  • ভিডিও
  • ছবি
  • এনটিভির অনুষ্ঠান
  • বিজ্ঞাপন
  • আর্কাইভ
  • কুইজ
Follow
  • মত-দ্বিমত
ছবি

কোহলির স্বপ্নজয়ে সারথি আনুশকা!

প্রকৃতিপ্রেমী বুবলী

ইউরোপের রাজাদের বিজয় উদযাপন

স্মার্ট লুকে কেয়া পায়েল

বর্ণিল আয়োজনে ‘মার্সেল হা-শো’ গ্র্যান্ড ফিনাল

জাপানে প্রধান উপদেষ্টা

কানে নজরকাড়া লুকে জাহ্নবী কাপুর

বর্ণিল সাজে সেমন্তী সৌমি

লাল টুকটুকে মিম

একান্তে তাহসান-রোজা

ভিডিও
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৫০
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১২
এই সময় : পর্ব ৩৮২৭
এই সময় : পর্ব ৩৮২৭
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৭
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১৭
কনকা সেরা পরিবার, সিজন ০৩, পর্ব : ১৭
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
কোরআন অন্বেষা : পর্ব ১৮১
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
মিউজিক নাইট : পর্ব ১৯৫
আপনার জিজ্ঞাসা : পর্ব ৩৩৭৮
আলোকপাত : পর্ব ৭৭৬
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১০:৩৬, ১৩ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১১:৪৫, ২৮ মার্চ ২০১৫
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১০:৩৬, ১৩ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১১:৪৫, ২৮ মার্চ ২০১৫
আরও খবর
ইভিএম ম্যানিপুলেট করা অসম্ভব : জাফর ইকবাল
সাদাসিধে কথা: সর্বজিৎ কিংবা শ্যামল কান্তির দেশ
সাদাসিধে কথা: রুখে দাঁড়াবে বাংলাদেশ
অশ্লীলতার সংজ্ঞা আর বই নিষিদ্ধের অশ্লীলতা
সাদাসিধে কথা: প্রিয় দীপন

দেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সর্বনাশ করল কে?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১০:৩৬, ১৩ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১১:৪৫, ২৮ মার্চ ২০১৫
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১০:৩৬, ১৩ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ১১:৪৫, ২৮ মার্চ ২০১৫

১.
আমি জানি, এ মুহূর্তে দেশের মানুষ এই প্রশ্নের উত্তরে বেগম খালেদা জিয়ার নাম বলবে। দেশের মানুষকে দোষ দেওয়া যাবে না; কারণ টানা হরতালের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের। যারা কট্টর বিএনপি কিংবা জামায়াতপন্থী, তারা অবশ্যি গলার রগ ফুলিয়ে বলবে, সব দোষ এই সরকারের। এই সরকার যদি গোয়ার্তুমি না করত, তাহলেই তো পেট্রলবোমা ফাটাতে হতো না, হরতাল ডাকতে হতো না।

রাজনীতির মাঠের ব্যাপারগুলো আমি মোটেও বুঝি না। মান্না-খোকার টেলিফোন আলাপটি প্রকাশ হওয়ার পর বলা যেতে পারে, আমি প্রথমবার মাঠের রাজনীতি খানিকটা বুঝতে পেরেছি। মাঠের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের কী হচ্ছে, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না এবং আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে যেটাকে খুবই খারাপ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়, মাঠের রাজনীতিতে সেটা আসলে হয়তো খুবই ভালো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত!

এই যে আমরা ভাবছি, দিনের পর দিন হরতাল ডেকে দেশের যাবতীয় সর্বনাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে বিএনপি ধীরে ধীরে সবার মনে বিষিয়ে দিচ্ছে, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, সেটা হয়তো শুধু আমাদের ধারণা। বিএনপির নেতা-নেত্রীরা হয়তো জানেন, এটা আসলে প্রায় ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের মতো বিশাল মহান একটি সফল আন্দোলন। কাজেই এসব ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই, দর্শক হিসেবে পুরো ব্যাপারটা দেখা ছাড়া আর কোনো কিছু করারও নেই।

কোনো কিছু বলার এবং করার না থাকলেও কিছু কিছু বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল না দেওয়ার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অনেক অনুনয়-বিনয় করেছেন। বলা যেতে পারে, আক্ষরিক অর্থে শুধু পা ধরতে বাকি রেখেছেন। কিন্তু বিএনপির (এবং তাদের সাথে থাকা অন্য দলগুলোর) মন গলেনি। দিনের পর দিন হরতাল ডাকা হয়েছে এবং একটার পর একটা পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে, পিছিয়ে দিতে হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ কিশোর-কিশোরী, তাদের ৩০ লাখ বাবা-মা এবং কোটিখানেক আপনজন গত দুই মাস নিয়মিতভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেদের ভাগ্যকে অভিশাপ দিয়েছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রায় একই সময়ে ‘ও’ লেভেল পরীক্ষার তারিখ পড়েছিল এবং তখন কিন্তু তাদের পরীক্ষার জন্য অবরোধে ছাড় দেওয়া হয়েছিল (২১ জানুয়ারি ২০১৫, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)। আমার প্রশ্নটি খুবই সহজ, যারা ‘ও’ লেভেল (কিংবা ‘এ’ লেভেল) পরীক্ষা দিচ্ছে, তারাও বাংলাদেশের ছেলেমেয়ে; বিএনপি তাদের জন্য যদি ছাড় দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের অন্য ছেলেমেয়েদের জন্য কেন ছাড় দেওয়া হবে না? বরং বলা যেতে পারে, যারা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, সংখ্যায় তারা অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, তাদের মাঝে আছে এ দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ে, মফস্বল আর গ্রামের ছেলেমেয়েরা।

আমি ব্যাপারটা নিয়ে একটু চিন্তা করে হাল ছেড়ে দিয়েছি। বিষয়টি হয়তো বোঝার জন্য খুবই সহজ, কিন্তু গ্রহণ করার জন্য খুবই কঠিন। এই দেশ যারা চালায় এবং অচল করে রাখে, দুই দলের কর্তাব্যক্তিরাই আসলে উচ্চবিত্তের মানুষ। তাদের ছেলেমেয়েরা সম্ভবত এসএসসি পরীক্ষা দেয় না; তারা সম্ভবত ইংরেজি মিডিয়ামে ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেলে পড়ে। কাজেই দেশ যদিও বা গোল্লায় যায়, অন্তত নিজেদের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষাটা যেন ঠিকমতো দেওয়া যায়, সে জন্য এ ব্যবস্থা। কিন্তু আমি যেটুকু জানি, তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি, ইংরেজি মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরাও প্রায় সমানভাবে ভুগছে।

যাই হোক, এটুকু ছিল আমার ভূমিকা, এবারে আসল বক্তব্যে আসি।

২.

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেভাবে দেশের লেখাপড়া আক্ষরিক অর্থে পঙ্গু করার সংগ্রামে নেমেছেন, সেটাকে তাদের দলের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র পেট্রলবোমার আক্রমণের সাথে তুলনা করা যায় (যাঁরা বিএনপির রাজনীতি সমর্থন করেন, তাঁরা সম্ভবত আমার এককভাবে একজনের নাম উল্লেখ করায় একটু বিরক্ত হচ্ছেন; কারণ কাগজে-কলমে এটি ২০টি ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত, একজনকে দায়ী করা ঠিক না। কিন্তু আমরা সবাই জানি, যদিও পুরো আন্দোলনটি করা হচ্ছে গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য, কিন্তু এই দলগুলোতে গণতন্ত্রের ‘গ’ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবকিছুই একজনের সিদ্ধান্ত, সে জন্য আমিও একজনের নাম লিখছি)।

পেট্রলবোমা যে রকম খুব দ্রুত একজনকে ধরাশায়ী করে ভয়ংকর যন্ত্রণা দিতে পারে, ঠিকভাবে পোড়াতে পারলে আক্রান্ত মানুষটি খুব কষ্ট পেয়ে মারা যায় এবং যদি কোনোভাবে বেঁচে যায়, তাহলে যে রকম সারা জীবনের জন্য একটা ক্ষতচিহ্ন বহন করতে হয়, হরতাল-অবরোধ দিয়ে লেখাপড়া আক্রমণ করাও অনেকটা সে রকম। সপ্তাহের পাঁচ দিন স্কুল-কলেজে না গিয়ে মাত্র দুই দিনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করলে খুব দ্রুত সেই একই রকম ক্ষতি হয়। যদি বা শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে ছেলেমেয়েরা পাস করেও ফেলে, এ দীর্ঘ দুই মাসের ক্ষতিটুকু কিন্তু তাদের সারা জীবন বহন করতে হবে।

তবে আমি আজকে লেখাপড়ার ওপর এই নিষ্ঠুর আক্রমণের কথা বলার জন্য কাগজ-কলম নিয়ে বসিনি, আমি সবার অগোচরে খুব ধীরে ধীরে লেখাপড়ার ওপর যে ‘স্লো পয়জনিং’ হচ্ছে, তার কথা বলতে বসেছি। তবে মূল বক্তব্যের আগে আমাকে একটু পুরোনো ইতিহাস বলতে হবে।

সেই যখন থেকে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষক হয়েছি, তখন থেকে আমি জানি, একজন ছেলে বা মেয়ে কী শিখেছে তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার শেখার আগ্রহ আছে কি না, শেখার ক্ষমতা আছে কি না সে বিষয়টি। এ দেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে আমার দুঃখের সীমা ছিল না। লেখাপড়ার নামে তাদেরকে কিছু জিনিস মুখস্থ করানো হতো, পরীক্ষার হলে গিয়ে সেটা তাদের উগড়ে দিতে হতো। পড়াশোনার পুরো বিষয়টি ছিল খুব কষ্টের, কারণ মানুষের মস্তিষ্ক মোটেও কোনো কিছু মুখস্থ করার জন্য তৈরি হয়নি। মানুষের মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছে বোঝার জন্য, জানার জন্য কিংবা বিশ্লেষণ করার জন্য। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মনে রাখার বিষয়টা মানুষের থেকে ভালো পারে শিম্পাঞ্জিরা।

তাই প্রথম যখন সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছিল, আমার আনন্দের সীমা ছিল না (তখন অবশ্যি সেটাকে বলা হতো, ‘কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপদ্ধতি’, কিন্তু ‘কাঠামোবদ্ধ’ নামটা কেমন যেন খটমটে মনে হয়েছিল বলে পাল্টে ‘সৃজনশীল’ করে দেওয়া হয়েছিল)। যাই হোক, সৃজনশীল প্রশ্নের মূল বিষয়টা ছিল খুবই সহজ, এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আর কখনো ছাত্রছাত্রীদের কিছু মুখস্থ করতে হবে না। তারা যদি পুরো বইটা মন দিয়ে পড়ে তাহলেই হবে, প্রশ্নগুলোর উত্তর তারা ভেবে ভেবে দিতে পারবে।

নূতন কিছু শুরু করা খুবই কঠিন, এখানেও সেটা দেখা গেল। সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি শুরু করামাত্রই অভিভাবকরা এর পেছনে লেগে গেলেন। স্বার্থপর অভিভাবকদের একটা মাত্র কথা ‘স্বীকার করি এটা খুবই ভালো পদ্ধতি, কিন্তু আমার ছেলে কিংবা মেয়ে আগের পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাক, তারপর এই পদ্ধতি প্রবর্তন করা হোক!’

তারা সৃজনশীল পদ্ধতির বিরুদ্ধে রীতিমতো আন্দোলন শুরু করে দিলেন। আমার মনে আছে, আমার যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের মুখস্থ করার যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করার এই সুযোগটা পেয়ে লুফে নিয়েছিলাম, তাঁরা সবাই মিলে সেটা রক্ষা করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গিয়েছিলাম। রীতিমতো যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত সারা পৃথিবীর ছেলেমেয়েরা যে পদ্ধতিতে (Bloom’s taxonomy) লেখাপড়া করে, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরাও সে পদ্ধতিতে লেখাপড়া করার এবং পরীক্ষা দেওয়ার একটা সুযোগ পেল। অন্যদের কথা জানি না, আমি খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন এই ছেলেমেয়েদের আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিজের ছাত্রছাত্রী হিসেবে পাব। কারণ, এই ছাত্রদের মস্তিষ্কগুলো থাকবে সতেজ, তীক্ষ্ণ এবং সৃজনশীল; মুখস্থ করিয়ে করিয়ে সেগুলো ভোঁতা করিয়ে দেওয়া হবে না।

কিছুদিনের ভেতরে আমি প্রথম দুঃসংবাদটি পেলাম, সেটি হচ্ছে যে সৃজনশীল প্রশ্নের গাইড বই বের হয়ে গেছে। খবরটি ছিল আমার কাছে অবিশ্বাস্য; কারণ সৃজনশীল প্রশ্নটাই করা হয়েছে যেন ছাত্রছাত্রীদের আর প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করতে না হয় সে জন্য। তার থেকেও আরো ভয়াবহ ব্যাপার ঘটতে থাকল, শুধু যে বাজারে গাইড বই বের হতে থাকল তা নয়, আমাদের দেশের বড় বড় পত্রিকাও ‘শিক্ষা পাতা’ বা এ ধরনের নাম দিয়ে তাদের পত্রিকায় গাইড বই ছাপাতে শুরু করল! এগুলো হচ্ছে সেই পত্রিকা, যারা এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।

দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো সংগ্রাম করে! পত্রিকার মূল কাজ সংবাদ ছাপানোর পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর্ট, কালচার নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জান কোরবান করে দেয়!

আমার খুব ইচ্ছে এই সকল পত্রিকার ‘মহান’ সম্পাদকদের সাথে কোনো দিন মুখোমুখি বসে জিজ্ঞেস করি, তারা কেমন করে এই দেশের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এত বড় প্রতারণা করেন (আমার মনে আছে, আমি কোনো একটি লেখায় এ ধরনের একটা পত্রিকার গাইড বইয়ের উদাহরণটি তুলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি গাইড বই ছাপানো বেআইনি হয়, তাহলে পত্রিকায় গাইড বই ছাপানো কেন বেআইনি হবে না, আমরা কেন এই পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারব না)।

যাই হোক, বাজারে এবং দৈনিক পত্রিকায় গাইড বই বের হওয়ার পর থেকে অনেক শিক্ষকই স্কুলের পরীক্ষায় এই গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দিতে শুরু করলেন। সেই সব শিক্ষকের ছাত্রছাত্রীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। একসময় শুধু পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নগুলো উত্তর ‘মুখস্থ’ করলেই চলত; এখন তাদের তার সাথে সাথে পুরো গাইড বইয়ের প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করা শুরু করতে হলো।

আমি পড়লাম মহাবিপদে। এ দেশের ছেলেমেয়েদের অনেকেই জানে, আমি এই সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি যেন শুরু হতে পারে তার জন্য অনেক চেঁচামেচি করেছি। তারা সরাসরি আমাকে অভিযোগ করতে শুরু করল। আমি তখন তাদের বুঝিয়ে বলতাম, যদি দুই নম্বরি শিক্ষক হয়, তাহলে সৃজনশীল গাইড বই পড়ে হয়তো স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব হতে পারে। কিন্তু পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি কিংবা এইচএসসির প্রশ্নগুলো কখনো কোনো গাইড বই থেকে আসবে না। পরীক্ষার আগে এই প্রশ্নগুলো প্রথমবার তৈরি করা হবে। কাজেই যারা গাইড বই মুখস্থ করবে, সত্যিকারের পরীক্ষায় তাদের কোনো লাভ হবে না। বরং উল্টো ব্যাপার ঘটবে, মুখস্থ করে করে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে তারা আসল পরীক্ষাগুলোতে নিজে নিজে ভাবনা-চিন্তা করে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাবে।

এতদিন আমি ছাত্রছাত্রীদের এভাবে বুঝিয়ে এসেছি এবং তারাও আমার যুক্তি মেনে নিয়েছে। এ বছর হঠাৎ করে আমি প্রথমবার সত্যিকারের বিপদে পড়েছি, আমার কাছে একজন এসএসসির বাংলা প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছে, সে প্রশ্নে গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়া আছে। প্রমাণ হিসেবে সে গাইড বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোও ফটোকপি করে দিয়েছে। ২০১৪ সালে যখন এইচএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে শুরু করল, তখন কিছুতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করতে রাজি হয়নি যে ব্যাপারটি আসলেই ঘটেছে।

আমি এবারে এসএসসির প্রশ্ন এবং গাইড বইয়ের প্রশ্ন পাশাপাশি দিয়ে দিচ্ছি, পাঠকরা নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। শুধু এ দুটি নয়, আরও অনেক প্রশ্ন আছে, লেখার শেষে আমি লিংক দিয়ে দিচ্ছি, যার ইচ্ছে ডাউনলোড করে সেগুলো নিজের চোখে দেখে নিতে পারবেন।

এর চেয়ে ভয়ংকর কোনো ব্যাপার কি কেউ কল্পনা করতে পারবে? যারা গাইড বই ছাপায়, আনন্দে তাদের বগল বাজানোর শব্দ কি সবাই শুনতে পাচ্ছেন? সেই শব্দ কি শিক্ষা বোর্ড বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছাবে? এই গাইড বই বিক্রেতারা কি এখন খবরের কাগজ, রেডিও, টেলিভিশনে বড় বড় করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না? সেখানে তারা ঘোষণা করবে, ‘আমাদের গাইড বই বাজারের সেরা, এখান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন বেছে নেওয়া হয়!’

যত স্বপ্ন এবং আশা নিয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি শুরু করা হয়েছিল, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার (নাকি দুর্নীতি?) কারণে এখন কি পুরো বিষয়টা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে না? শিক্ষা বোর্ডের কাছে নিশ্চয়ই রেকর্ড আছে; তারা খুব ভালোভাবে জানেন কারা এই প্রশ্ন করেছে। আমরা কি আশা করতে পারি না, যেসব প্রশ্নকর্তা এই দেশের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীর লেখাপড়ার পুরোপুরি সর্বনাশ করে দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে একটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন আর কখনো এ রকম ঘটনা না ঘটে তার একটা গ্যারান্টি দেবেন?

কারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে, তাদের কখনো ধরা যায়নি; কিন্তু কারা গাইড বই থেকে প্রশ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করেন, তাদের ধরতে তো কোনো সমস্যা নেই! মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে জোড় হাত করে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে অনুরোধ করেছিলেন এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল না দিতে, ঠিক একইভাবে জোড় হাত করে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব, এসএসসি পরীক্ষায় গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে না দিতে।

৩

গাইড বই থেকে তুলে দেওয়া প্রশ্ন দিয়ে তৈরি করা এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নের পাশাপাশি ভিন্ন আরও একটি প্রশ্নপত্র আমার হাতে এসেছে। এই প্রশ্নটি জাতীয় কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যমের পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্রটির খানিকটা অংশ আমি এই লেখার সাথে যুক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জানি না সেটা পত্রিকায় দেখানো সম্ভব হবে কি না। লেখার শেষে আমি এটারও লিংক দিয়ে দিচ্ছি, যে কেউ সেটা ডাউনলোড করে পুরোটা দেখে নিতে পারবেন।

এসএসসি পরীক্ষায় গাইড বই থেকে নেওয়া প্রশ্ন দেখে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি, কিন্তু ইংরেজিতে লেখা পদার্থবিজ্ঞানের এই প্রশ্নটি দেখে লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেছে। একটা এত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ইংরেজি ভাষার এই নমুনা দেখেও আমার বিশ্বাস হতে চায় না, কেমন করে শিক্ষা বোর্ড ছাত্রছাত্রীদের হাতে এই প্রশ্ন তুলে দিল? প্রতিটি প্রশ্ন ভুল ইংরেজিতে লেখা, ছোটখাটো ভুল নয়, উৎকট ভুল। যেমন, Who is invented air pump? How many power of an electric fan? which mirror use of aolar oven? ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রশ্নটি দেখেই বোঝা যায়, এটি আসলে চরম হেলাফেলায় একটা উদাহরণ। ইংরেজি কারিকুলামের প্রশ্ন করার জন্য শুদ্ধ ইংরেজি লিখতে পারে এ রকম একজন শিক্ষক এই দেশে নেই, তা হতে পারে না। এর অর্থ, যাঁরা এর দায়িত্বে আছেন, তাঁদের লজ্জা-শরম বলে কিছু নেই। আমরা যাঁরা এটা দেখি, তাঁরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। যাঁরা এই কাজটি করেন, তাঁরা একটুও লজ্জা পান না, বরং বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান।

লেখার শুরুতে বলেছিলাম, বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দলবল নিয়ে এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি করেছেন, সেটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে কি না আমরা জানি না।

সেই সাথে আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বেগম খালেদা জিয়ার মতো রাতারাতি সর্বনাশ না করলেও খুব ধীরে ধীরে এই দেশের শিক্ষার সর্বনাশ করার কাজটি কিন্তু করে যাচ্ছে যাদের ওপর আমরা এই দেশের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার দায়িত্ব দিয়েছি, তারাই!

আবার হাত জোড় করে বলছি, বাঁচান, আমাদের ছেলেমেয়েদের সর্বনাশ থেকে বাঁচান!

লিংক দুটো হচ্ছে :

https://dl.dropboxusercontent. com/u/10556953/ guide.pdf
https://dl.dropboxusercontent. com/u/10556953/ eng.pdf

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল : লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

পাঠকের পছন্দ

গরমে ঘামাচিতে জেরবার?

ভ্রমণের সময় যা মনে রাখবেন

কীভাবে হবেন ভালো সহকর্মী?

সর্বাধিক পঠিত
  1. ‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি
  2. যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ
  3. মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল
  4. রহস্য নিয়ে আসছে অজয়ের ‘দৃশ্যম ৩’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা
  5. বলিউডের স্মরণীয় জুটি
  6. সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’ মুক্তির নতুন তারিখ ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত

‘ধুম ৪’ সিনেমায় খলনায়ক রণবীর, পরিচালক আয়ন মুখার্জি

যে সিনেমায় অভিনয় করতে টাকা নেননি অমিতাভ

মা হলেন ‘হীরামন্ডি’ খ্যাত অভিনেত্রী শারমিন সেগাল

রহস্য নিয়ে আসছে অজয়ের ‘দৃশ্যম ৩’, মুক্তির তারিখ ঘোষণা

বলিউডের স্মরণীয় জুটি

ভিডিও
এই সময় : পর্ব ৩৮২৭
এই সময় : পর্ব ৩৮২৭
সংলাপ প্রতিদিন : পর্ব ২৫০
জোনাকির আলো : পর্ব ১২৪
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ফাউল জামাই : পর্ব ৯৯
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছুটির দিনের গান : পর্ব ৪১৫ (সরাসরি)
ছাত্রাবাঁশ : পর্ব ১২
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫৩৬
স্বাস্থ্য প্রতিদিন : পর্ব ৫৫৩৬
নাটক : প্রেম আমার
নাটক : প্রেম আমার
রাতের আড্ডা : পর্ব ০৭
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০০
এক্সপার্ট টুডেস কিচেন : পর্ব ৩০০

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Alhaj Mohammad Mosaddak Ali

Chairman

NTV Online, BSEC Building (Level-8), 102 Kazi Nazrul Islam Avenue, Karwan Bazar, Dhaka-1215 Telephone: +880255012281 up to 5, Fax: +880255012286 up to 7

Browse by Category

  • About NTV
  • Career
  • NTV Programmes
  • Advertisement
  • Web Mail
  • NTV FTP
  • Satellite Downlink
  • Europe Subscription
  • USA Subscription
  • Privacy Policy
  • Terms & Conditions
  • Contact
  • Archive

NTV Prime Android App

Find out more about our NTV: Latest Bangla News, Infotainment, Online & Live TV

Qries

Reproduction of any content, news or article published on this website is strictly prohibited. All rights reserved

x