আত্মসমর্পণের শর্তে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের

গাজায় সক্রিয় সব সশস্ত্রগোষ্ঠীকে আত্মসমর্পণ করার শর্তে দেওয়া যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি গাজায় ১৮ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছে।
গতকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি আলজাজিরা আরবিকে বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সব প্রস্তাবের জন্য হামাস প্রস্তুত।’ তবে সর্বশেষ ইসরায়েলি খসড়া প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের ‘আত্মসমর্পণ’ করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
আবু জুহরি বলেন, ‘নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ভণ্ডুল করার জন্য অবাস্তব শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।’
হামাসের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সর্বশেষ প্রস্তাবে দখলদার ইসরায়েল পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দেয়নি, বরং কেবল তারা বন্দিদের গ্রহণ করতে চায়। গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ও উপত্যকা থেকে সরে যাওয়ার শর্তে আমরা জীবিত সব বন্দির মুক্তি ও মৃতদের লাশ হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।’
আবু জুহরি আরও বলেন, ‘হামাসের আত্মসমর্পণ করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করব না। হামাস আত্মসমর্পণ করবে না, সাদা পতাকা উত্তোলন করবে না। দখলদারদের বিরুদ্ধে সব প্রকার চাপ প্রয়োগ করে যাবে হামাস।’
সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির ইসরায়েলের খসড়া প্রস্তাবে দেখা যায়, এই যুদ্ধবিরতি ৪৫ দিনের জন্য কার্যকর করা হবে। এর অংশ হিসেবে হামাসের হাতে বন্দি থাকা সব ইসরায়েলিকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
১২ দফার এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথম সপ্তাহে বন্দি থাকা ইসরায়েলিদের অর্ধেক সংখ্যককে মুক্তি দিতে হবে। এর বিনিময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় খাবার ও পানীয় প্রবেশের সুযোগ দেবে ইসরায়েল।
উপত্যকাটিতে ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী উপকরণ, ওষুধ, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল প্রবেশ করতে দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মদদপুষ্ট দখলদার ইসরায়েল।
গত সপ্তাহে প্যালেস্টাইন নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন নেটওয়ার্ক (পিএনওএন) সতর্ক করে বলেছে, গাজার পরিস্থিতি ‘দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। ইসরায়েলিদের বোম হামলায় খাদ্য গুদাম, পানি বিশুদ্ধ করার প্ল্যান্ট ও কমিউনিটি রান্নাঘরগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজায় ‘একটি দানাও’ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না—ইসরায়েলি অতি ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালের এমন ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর এই সতর্কবার্তা এলো।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তুলে আসছে।
গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়ভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের একটি বিশেষ কমিটি গাজায় যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে দুর্ভিক্ষ তৈরি করার অভিযোগ আনে, যেটিকে ‘সম্ভাব্য গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে চালানো ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজার ৫৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় মোট নিহত হয়েছেন ৫০ হাজার ৯৪৪ জন।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতির ফলে গাজায় হামলা বন্ধ করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু মার্চের মাঝামাঝিতে আবারও তীব্র হামলা শুরু করে দখলদার বাহিনী। এর কয়েকদিন পর হামাস ইসরায়েলে আবারও রকেট হামলা চালায়।