ইউক্রেনে ব্যাপক হামলার পর পুতিনকে ‘পাগল’ বললেন ট্রাম্প
রাশিয়ার ইউক্রেনবিরোধী সর্ববৃহৎ বিমান হামলার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘সম্পূর্ণ পাগল’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “আমি খুবই অসন্তুষ্ট। ও কী করছে! প্রচুর মানুষকে হত্যা করছে।”
নিউ জার্সিতে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার (২৫ মে) রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি, তার সঙ্গে সবসময়ই সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন সে শহরে রকেট ছুঁড়ে মানুষ হত্যা করছে—এটা আমি একদমই পছন্দ করছি না।” খবর বিবিসির।
রোববার রাতে ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। রাশিয়া ওই রাতে ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, যা ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার হামলার পর এক রাতে সবচেয়ে বড় আক্রমণ।
সোমবার সকালেও ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বাজানো হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খারকিভ শহরে এক শিশুসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র ইগর তেরেখভ।
রাশিয়ার এই আক্রমণ নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “ওয়াশিংটনের নীরবতা পুতিনকে উৎসাহিত করছে।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং দৃঢ় চাপ প্রয়োগ করতে হবে।”
ট্রাম্প পরে ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, “পুতিন পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে। আমি আগেই বলেছিলাম, সে শুধু ইউক্রেনের একটা অংশ নয়, পুরো দেশটাই চায়—এবং হয়তো এখন সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। তবে সে যদি তা করে, তাহলে তা রাশিয়ার পতনের কারণ হবে।”
তবে জেলেনস্কিকেও একহাত নেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “জেলেনস্কি যেভাবে কথা বলছে, তাতে তার দেশের কোনো উপকার হচ্ছে না। তার মুখ থেকে যা-ই বের হচ্ছে, তা শুধু সমস্যা তৈরি করছে। এটা আমি একদমই পছন্দ করছি না এবং এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে—এই প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না হলে তারা আলোচনা থেকে সরে আসবে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টাব্যাপী একটি ফোনালাপ হয়। সেই আলোচনার পর ট্রাম্প জানান, “আলোচনাটি খুব ভালো হয়েছে” এবং উভয় দেশ “অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির পথে আলোচনা শুরু করবে” বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইউক্রেন সরকার ইতোমধ্যে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে পুতিন কেবল ‘ভবিষ্যৎ শান্তির সম্ভাব্য স্মারকলিপি’র ওপর কাজ করতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে, যা কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের মতে কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল।
চলতি বছরের ১৬ মে ইস্তাম্বুলে ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও ইউক্রেন সরাসরি আলোচনা করেছে। তবে একটি বড় ধরনের বন্দি বিনিময় ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখল করা দক্ষিণের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ।