ভাইরাল ভিডিও ঘিরে ফের আলোচনায় ছাত্র-শিক্ষিকার প্রেম

সম্প্রতি একটি ভাইরাল ভিডিও ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তাঁর স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁর দীর্ঘদিনের প্রেমকাহিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, ভিয়েতনাম সফরের সময় বিমান থেকে নামার আগে ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ স্বামীর মুখ সরিয়ে দেন—যা অনেকেই ‘থাপ্পড়’ বলে দাবি করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে ফ্রান্সে এবং বাইরের দেশেও। খবর এনডিটিভির।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ব্রিজিতের সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। তখন ম্যাক্রোঁ ১৫ বছরের কিশোর, আর ব্রিজিত ৩৯ বছর বয়সী একজন শিক্ষক—অ্যামিয়াঁ শহরের ক্যাথলিক স্কুল ‘লা প্রোভিদঁস’-এ ফরাসি ভাষা পড়াতেন তিনি। উল্লেখযোগ্যভাবে, ব্রিজিতের বড় মেয়ে তখন ম্যাক্রোঁর সহপাঠী ছিলেন।
ব্রিজিত তখন ব্যাংকার আন্দ্রে-লুইস অজিয়েরকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাঁদের তিন সন্তান ছিল। সম্পর্কের বিষয়টি ধরা পড়ে ১৯৯৪ সালের গ্রীষ্মে, যখন পরিবারের সদস্যরা তাঁদের একসঙ্গে সানবাথ করতে দেখে ফেলেন। এরপরই ব্রিজিতের সংসার ভেঙে যায়।
তাদের সম্পর্ককে ঘিরে সামাজিকভাবে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ব্রিজিতকে। গোপন চিঠি, কুৎসা রটনা এমনকি তাঁর বাড়ির দরজায় থুতু ছুঁড়ে মারার মতো ঘটনাও ঘটে। বন্ধুরাও মুখ ফিরিয়ে নেন। সাংবাদিক ম্যায়েল ব্রুনের লেখা আত্মজীবনী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ: এ্যান আনফিট্রেড উইম্যান-এ এসব বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।

ম্যাক্রোঁ এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য প্যারিস চলে যান, কিন্তু দুজনের সম্পর্ক টিকে থাকে। ব্রিজিত পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমি ভেবেছিলাম সম্পর্কটা থাকবে না, কারণ ও তো নিশ্চয়ই ওর বয়সী কাউকে ভালোবেসে ফেলবে।” তবে ২০০৭ সালে, ব্রিজিতের ডিভোর্স চূড়ান্ত হওয়ার পর এই দম্পতি বিয়ে করেন লে তুকেতে—যেখানে ব্রিজিত তাঁর প্রথম স্বামীকেও বিয়ে করেছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে ব্রিজিত বলেছিলেন, “হ্যাঁ, আমরা একসঙ্গে প্রাতরাশ করি—আমি আমার বয়স আর বলিরেখা নিয়ে, আর ও তাঁর তারুণ্য নিয়ে। কিন্তু সম্পর্কটা এমনই।”

২০১৪ সালে ম্যাক্রোঁ যখন ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী হন, তখন ব্রিজিত শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে তাঁকে পূর্ণ সময়ের সমর্থন দেন। তবে প্রেসিডেন্সি অভিযানে তাঁদের সম্পর্ককে ঘিরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে—ম্যাক্রোঁ নাকি রেডিও ফ্রান্সের এক পুরুষ কর্মকর্তার সঙ্গে গোপনে প্রেমে জড়িয়েছেন, আর ব্রিজিত নাকি শুধু ঢাল হিসেবে আছেন। ম্যাক্রোঁ গুজব অস্বীকার করেন, তবে তা ব্রিজিতের ওপর গভীর মানসিক প্রভাব ফেলে।
সাম্প্রতিক ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে ম্যাক্রোঁ বলেছেন, “আমরা শুধু মজা করছিলাম, কিন্তু মুহূর্তটি যেন কোনো মহাজাগতিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। সবাই একটু শান্ত হোন।”

ফরাসি রাজনীতির অন্যতম আলোচিত এই দম্পতির সম্পর্ক একদিকে যেমন অনন্য, তেমনি বিতর্ক ও জিজ্ঞাসার কেন্দ্রবিন্দু হয়েই রয়ে গেছে।