পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের ঘোষণা ইসরায়েলের

অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে ২২টি নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন ইসরায়েলি সরকার। গত কয়েক দশকের মধ্যে বসতি সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ এটি। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ও অর্থমন্ত্রী বেতজালেল স্মোট্রিচ আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সপ্তাহ আগে সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেন। খবর বিবিসির।
ইসরায়েল কাটজ ও বেতজালেল স্মোট্রিচের ঘোষণা অনুযায়ী, এই বসতিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি আগে থেকেই সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যমান ছিল, যা এখন ইসরায়েলি আইন অনুযায়ী বৈধতা পাবে। বাকিগুলো সম্পূর্ণ নতুন বসতি।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। যদিও ইসরায়েল এই দাবিকে বিতর্কিত বলে মনে করে এবং নিজেদের ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করার অধিকার আছে বলে দাবি করে। এই বসতি স্থাপন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য বিপজ্জনক ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র গঠন করতে বাধা দেবে। এটি হবে ‘আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে একটি বাফার।’
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র এটিকে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ বলে অভিহিত করে বলেন, “এই অঞ্চলকে ‘সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার চক্রে’ টেনে নিয়ে যেতে চায় ইসরায়েল।”
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদিনাহ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই চরমপন্থি ইসরায়েলি সরকার যেকোনো উপায়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনকে রোধ করার চেষ্টা করছে।’
ইসরায়েলের বসতি বিরোধী নজরদারি সংস্থা ‘পিস নাও’ এই পদক্ষেপকে গত ৩০ বছরের মধ্যে ‘সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলছে, এটি ‘পশ্চিম তীরকে নাটকীয়ভাবে পুনর্গঠিত করবে এবং দখলকে আরও সুদৃঢ় করবে।’
পিস নাওয়ের পরিচালক লিওর আমিহাই বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকার আর অভিনয় করছে না: অধিকৃত অঞ্চলের সংযুক্তি ও বসতি সম্প্রসারণই তাদের প্রধান লক্ষ্য।’
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করার পর থেকে প্রায় ১৬০টি বসতি নির্মাণ করেছে। যেখানে বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বসবাস করছে। ফিলিস্তিনিরা গাজার পাশাপাশি এই ভূমিগুলোকে তাদের বলে দাবি করে।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্ষমতায় ফেরার পর এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ফলে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বসতি সম্প্রসারণ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত বছর জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত একটি উপদেষ্টা মতামত জারি করেছিল। যেখানে বলা হয়েছিল, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের অব্যাহত বসতি স্থাপন অবৈধ’ এবং ইসরায়েলকে ‘সমস্ত বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেওয়া উচিত।’