ফের শান্তি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন

২০২২ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আজ সোমবার (২ জুন) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এ আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে যুদ্ধ বন্ধের পথে দুই পক্ষ এখনও বহু দূরে অবস্থান করছে। যুদ্ধ বরং আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
আলোচনায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ, আর রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি।
মেডিনস্কি আগের আলোচনা শেষে বলেছিলেন, “যুদ্ধ ও আলোচনা একসাথে চলতে পারে”—এই মন্তব্যে নেপোলিয়নের দৃষ্টান্ত টেনেছিলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষকে দ্রুত শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি পক্ষগুলো "অতিরিক্ত জেদ" দেখায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র "পিছিয়ে যাবে"।
আলোচনার আগে যুদ্ধ থেমে না গিয়ে বরং আরও তীব্র হয়েছে। রোববার ইউক্রেন রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় পরমাণু অস্ত্রবাহী বোমারু বিমান ঘাঁটিতে একটি বড় আক্রমণ চালায়। অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে রেকর্ড ৪৭২টি ড্রোন হামলা চালায়—যেটি যুদ্ধের ইতিহাসে এক রাতে সবচেয়ে বেশি ড্রোন হামলা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনার প্রস্তাব দিলেও যুদ্ধবিরতির আগে একটি শান্তিচুক্তির খসড়া তৈরির কথা বলেন। কিয়েভ জানিয়েছে, তারা এখনও রাশিয়ার পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাবনার খসড়া পায়নি।
তবে ইউক্রেন তাদের প্রস্তাবিত শান্তির রূপরেখা ইতোমধ্যে রাশিয়াকে পাঠিয়েছে। ওই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে:
* যুদ্ধ-পরবর্তী ইউক্রেনের সামরিক শক্তির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না
* দখলকৃত অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে না
* রাশিয়াকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
* বর্তমান যুদ্ধরেখাই আলোচনা শুরুর ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১০০ বর্গকি.মি. এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা প্রায় যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্যের সমান।

আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্পের দূত কিথ কেলগ। তবে তারা কী পর্যায়ের প্রতিনিধি হবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত বছর জুনে পুতিন বলেছিলেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে হবে এবং চারটি দখলকৃত অঞ্চল থেকে সৈন্য সরাতে হবে—তাহলেই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে।
২০১৪ সালে ডনবাস অঞ্চলে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১২ লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।
যুদ্ধ-আলোচনা সমান্তরালভাবে চললেও, বাস্তবতা বলছে, এখনই শান্তির আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। পক্ষদ্বয়ের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য ও বিশ্বাসহীনতা এই প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘতর করে তুলছে।