ভারতের শহরগুলোতে বর্ষাকালে কেন জলাবদ্ধতা-যানজট হয়

ভারতের বড় বড় শহরে প্রতিবছর বর্ষাকালে বৃষ্টির পর ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, যানজট ও জনদুর্ভোগের চিত্র এখন যেন নিয়মিত ঘটনা।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ে বৃষ্টিপাতে অচল হয়ে পড়ে নগরজীবন। রাস্তা নদীতে পরিণত হয়, গাড়ি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়, নিচু এলাকাগুলো মুহূর্তেই পানিতে ডুবে যায়। এমনকি নতুন নির্মিত মেট্রো স্টেশনও জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
মুম্বাই পৌর করপোরেশন (বিএমসি) দায় চাপিয়েছে নালায় আবর্জনা জমা ও নির্মাণ কাজের ধ্বংসাবশেষের ওপর। যদিও সমালোচনার মুখে পরে পানি নিষ্কাশনে পাম্প বসানো ও নালা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এই সমস্যা কেবল মুম্বাইয়ের নয়। দিল্লি, বেঙ্গালুরুসহ ভারতের প্রায় সব বড় শহরেই একই চিত্র। খবর বিবিসির।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল পরিকাঠামো এবং পরিবেশগত অবহেলাই এই সংকটের মূল কারণ। বহু শহরের জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনও বহু দশক আগের পরিকল্পনার ওপর নির্ভরশীল।

নগর পরিকল্পনাবিদ দীক্ষু কুকরেজা বলেন, "নগর সম্প্রসারণের গতি পরিকাঠামোর উন্নয়নের চেয়ে অনেক বেশি। জলাধার, খাল ও প্রাকৃতিক নিষ্কাশনের জায়গাগুলো দখল হয়ে গেছে।"
ভারতে মোট বাৎসরিক বৃষ্টির ৮০ শতাংশ বর্ষাকালে হয়, যা জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই মৌসুম কৃষি ও লাখ লাখ কৃষকের জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও খরার ঘটনা বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়ছে কোটি মানুষের ওপর।
এবার বর্ষা নির্ধারিত সময়ের আগেই দক্ষিণ ভারতে পৌঁছেছে, যার ফলে অনেক রাজ্য প্রস্তুত ছিল না।
দিল্লির মিন্টো ব্রিজ প্রতি বছর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার প্রতীক হয়ে ওঠে—সেখানে বাস বা ট্রাক আটকে পড়ার দৃশ্য নিয়মিতই সামনে আসে।
চলতি বছরে দিল্লি রেকর্ড ১৮৫ মি.মি. বৃষ্টিতে মে মাসেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, যা ১৯০১ সালের পর সর্বোচ্চ।

বেঙ্গালুরুতে একসময় প্রচুর লেক থাকলেও এখন সেগুলোর জায়গা নিয়েছে অ্যাপার্টমেন্ট, বাণিজ্যিক ভবন ও রাস্তা—ফলে শহরটি বর্ষায় অতিমাত্রায় প্লাবনের ঝুঁকিতে থাকে।
শহরভেদে সমস্যার ধরন আলাদা হলেও মূল সমস্যা এক—অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দুর্বল পরিকাঠামো।