ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন
ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। গতকাল বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন, যেখানে তিনি শেখ হাসিনার পতনের পর বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সমর্থন চেয়ে সফর চালিয়ে যাচ্ছেন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, যুক্তরাজ্যের ‘নৈতিক দায়িত্ব’ আছে বাংলাদেশকে চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সাহায্য করার। তার ভাষায়, এ অর্থ ‘চুরি করা হয়েছে’ এবং এর একটি বড় অংশই এখন যুক্তরাজ্যে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমার স্টারমারের সঙ্গে সরাসরি কোনো কথা হয়নি। তবে আমার কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবেন।”
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্য সরকার থেকে জানানো হয়েছে, কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাতের কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে ড. ইউনূসের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য সরকার ইতোমধ্যেই পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে কিছু সহায়তা করছে। তিনি আশা করছেন, এই সফরের মাধ্যমে “আরও উদ্দীপনামূলক সমর্থন” আদায় করা সম্ভব হবে।
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা তার ১৬ বছরের শাসনকালে “ক্ষমতাকে অর্থ লুটপাটের অস্ত্রে পরিণত করেছেন”, যা পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠদের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার শাসনামলে আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। যুক্তরাজ্য এসব অর্থের অন্যতম প্রধান গন্তব্য। এছাড়াও কানাডা, সিঙ্গাপুর, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও মধ্যপ্রাচ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে বলেও দাবি করেন ড. ইউনূস।
তিনি বলেন, “এটা কেবল শুরু। আমাদের লক্ষ্য যুক্তরাজ্যের সব স্তরের সহায়তা লাভ—ব্যবসা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ পর্যন্ত।”
প্রতিবেদনটি উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্তের ফলে ব্রিটিশ লেবার পার্টি এবং স্টারমারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও সাবেক দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক—যিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নি—ব্যক্তিগতভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির কাছ থেকে সম্পদ ও আর্থিক সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেন, শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

টিউলিপ সম্প্রতি ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। তবে ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, তিনি টিউলিপের সঙ্গে দেখা করবেন না। তার ভাষায়, “এটা কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া।”
ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) লন্ডনে হাসিনার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর ছেলের মালিকানাধীন দুটি প্রপার্টির ওপর ফ্রিজিং অর্ডার জারি করেছে। এর মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের কিছুটা হদিস মিলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা যুক্তরাজ্যের জনগণের সমর্থন চাই। আমরা চাই তারা বুঝুক, এটি শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়—এটি একটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।”