দুর্ঘটনাকবলিত এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার

ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) উদ্ধার করেছে তদন্তকারী দল। এর ফলে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বড় অগ্রগতি হলো বলে মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে বিমানের ২৪১ জন যাত্রীসহ অন্তত ২৭০ জন নিহত হন।
কী কাজে লাগে এই রেকর্ডার?
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বিমানের ককপিটের অডিও, পাইলটদের কথোপকথন, সিস্টেম অ্যালার্ম এবং আশপাশের শব্দ রেকর্ড করে রাখে। এটি দুর্ঘটনার সময় কী ঘটেছিল, তা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এর আগে শুক্রবার ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) উদ্ধার করা হয়, যা বিমানের উচ্চতা, গতি, ইঞ্জিনের পারফরম্যান্সসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে। এই দুটি ডিভাইস মিলেই গঠিত হয় তথাকথিত ‘ব্ল্যাক বক্স’—যা আসলে কমলা রঙের হয় এবং দুর্ঘটনার পর সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রতিফলক স্ট্রিপ দিয়ে ঘেরা থাকে।
আন্তর্জাতিক তদন্তে যুক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) এই তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) ও যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরাও তদন্তে অংশ নিচ্ছে।
রোববার (১৫ জুন) এনটিএসবি-এর একটি দল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। একইসঙ্গে বোয়িং এবং ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)-এর কর্মকর্তারাও তদন্তে সহযোগিতা করছেন।
ভারত সরকার পৃথকভাবে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে, যারা তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেবে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তাব করবে।
দেহ শনাক্তকরণে চলছে দীর্ঘ প্রক্রিয়া
বিমানের ২৪২ যাত্রীর মধ্যে কেবল একজন ছাড়া সবাই নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, মাটিতে থাকা অনেক বাসিন্দাও মারা গেছেন।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৯০ জনের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালের ডা. রাজনীশ প্যাটেল। এর মধ্যে ৪৭টি মরদেহ ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিও নিহতদের মধ্যে
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি, যার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সোমবার রাজকোটে অনুষ্ঠিত হবে।
এখনও অনেক মরদেহ শনাক্ত হয়নি। অনেক পরিবারের মতো মিষ্ট্রি জিগনেশও অপেক্ষা করছেন তার নিখোঁজ ভাতিজির খবরের জন্য।

তিনি বলছিলেন, “যখন এখনও অনেক মরদেহ মেলেনি, তখন কীভাবে ডিএনএ পরীক্ষা শেষ হবে? যদি আমার ভাতিজির দেহই না পাওয়া যায়?”
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই তা আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতাল ও বিএজে মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের আবাসিক ভবনে আছড়ে পড়ে। নিহতদের বেশিরভাগই আগুনে পুড়ে চেনার অযোগ্য হয়ে গেছেন, ফলে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ধীরে এগোচ্ছে।