‘গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা জোরদার করছে মধ্যস্থতাকারীরা’

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির নতুন একটি চুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীরা তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছে বলে জানিয়েছে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা এখনও অচল অবস্থায় রয়েছে বলেও জানিয়েছে তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই বক্তব্য এমন সময় এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধ বন্ধের পর থেকে “বড় অগ্রগতি” হচ্ছে এবং তার দূত স্টিভ উইটকফের মতে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি “খুব কাছাকাছি” রয়েছে।
এদিকে, বুধবার ইসরায়েলি বাহিনীর গাজাজুড়ে চালানো হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে অনেকেই খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয় গাজা নিয়ে বড় অগ্রগতি হচ্ছে। আমি স্টিভ উইটকফের সঙ্গে কথা বলেছি, সে বলেছে গাজা চুক্তি খুব কাছাকাছি।”
তবে হামাসের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীরা সক্রিয় যোগাযোগ রাখলেও এখন পর্যন্ত কোনো নতুন প্রস্তাব তারা পাননি।
ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা হারেৎজ পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আলোচনায় এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় আলোচনার শেষ ধাপটি মে মাসের শেষ দিকে স্থবির হয়ে পড়ে। সে প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং জীবিত ও মৃত ইসরায়েলি বন্দিদের অর্ধেক মুক্তির বিষয়টি ছিল।
পূর্ববর্তী দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল ১৮ মার্চ গাজায় আবারও হামলা শুরু করে। সেই থেকে অন্তত ৫০ জন বন্দি গাজায় রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েল মার্চের শুরুতে গাজায় মানবিক সহায়তার ওপর পূর্ণ অবরোধ জারি করে, যা ১১ সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের চাপে কিছুটা শিথিল করে। এরই মধ্যে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামে একটি নতুন সহায়তা বণ্টন ব্যবস্থার সূচনা হয়, যা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
জিএইচএফ দাবি করেছে, ২৬ মে থেকে তারা ৪৪ মিলিয়নের বেশি খাবার সরবরাহ করেছে। তবে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এটিকে মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২৬ মে থেকে এ পর্যন্ত সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার জন আহত হয়েছেন।
বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় গাজায় জিএইচএফ এর সহায়তা কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ জনতার ওপর ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ৬ জন নিহত হয় বলে জানায় হামাসের সিভিল ডিফেন্স। রাফাহ শহরে জিএইচএফ-এর অন্য এক কেন্দ্রের কাছে আরও ৩ জন নিহত হন।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ঐসব এলাকায় কোনো হতাহতের বিষয়ে অবগত নয় এবং জিএইচএফ বলেছে, তাদের কেন্দ্রের আশপাশে কোনো ঘটনার খবর সঠিক নয়।

গাজা সিটির এক বাসিন্দা আবু মোহাম্মদ বারবার বলেছেন, “এই সহায়তা কেন্দ্রগুলো আসলে মৃত্যু কেন্দ্র।”
ইউনিসেফ মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজা সফর শেষে বলেছেন, “খাদ্য থেকে বঞ্চিত জনগণকে একটি ‘মরণ ফাঁদে’ ফেলা হচ্ছে।”
বুধবার ভোরে গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এক বাড়িতে বিমান হামলায় ৬ জন, দেইর আল-বালাহ শহরে আরেকটি হামলায় ৫ জন নিহত হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৬ হাজার ১৫৭ জন নিহত হয়েছেন।