রাফায় ‘মানবিক শহরের’ আড়ালে ‘বন্দি শিবির’ তৈরির নীলনকশা

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার দক্ষিণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শাসিত সরকারের ‘মানবিক শহর’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলেরই দুজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের ‘বন্দি শিবিরে’ আটকানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। খবর আলজাজিরার।
গতকাল রোববার (১৩ জুলাই) ইসরায়েলের দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ ও এহুদ ওলমার্ট এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করার জন্য ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন দলের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ ইসরায়েলি আর্মি রেডিওকে বলেন, রাফা শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর ‘মানবিক শহর’ গড়ে তোলার এই পরিকল্পনা কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, ‘সবদিক ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বলা যায়, এটি একটি খারাপ ধারণা; নিরাপত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা লজিস্টিক যেকোনো প্রেক্ষিতই হোক না কেন।’
২০২২ সালে ছয় মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ইয়াইর লাপিদ আরও বলেন, ‘আমি একটি বন্দি শিবিরকে মানবিক শহর হিসেবে তুলনা করতে চাই না। কথা হলো, যদি সেখান থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ থাকে, তাহলে সেটি অবশ্যই একটি বন্দি শিবির।’
ইসরায়েলি সরকারের তথ্য অনুসারে, এই মুহূর্তে গাজার দক্ষিণ উপকূলের ঘনবসতিপূর্ণ আল-মাওয়াসি এলাকার তাঁবুতে থাকা ছয় লাখেরও বেশি বাস্তুহারা ফিলিস্তিনিকে ওই ‘মানবিক শহরে’ থাকার ব্যবস্থা করা হবে। তবে সত্যিকার অর্থে উপত্যকাটির প্রায় পুরো জনসংখ্যাকে, অর্থাৎ প্রায় ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকেই সেখানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী রাফায় জোরেশোরে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে, এমন খবর পাওয়া গেছে। প্রমাণ পাওয়া গেছে, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতেও। গত ৪ এপ্রিল রাফায় ধ্বংস করা ভবন ছিল ১৫ হাজার ৮০০টি। তবে জুলাই মাসের ৪ তারিখে সেই সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৬০০তে।

২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এহুদ ওলমার্টও ইসরায়েলি পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছেন। এ সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত, এটা আসলে বন্দি শিবির। যদি ফিলিস্তিনিদের এই মানবিক শহরে নির্বাসিত করা হয়, তবে ধরে নেবেন এটা জাতিগত নির্মূল কাজের অংশ।’
এহুদ ওলমার্ট আরও বলেন, ‘যখন ইসরায়েলিরা পরিকল্পনা করছে একটি শিবির নির্মাণের, যেখানে কিনা তারা গাজাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে, তখন আপনার বুঝতে হবে–এটা ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য করা হচ্ছে না। এটা করা হচ্ছে তাদের ছুড়ে ফেলতে, তাদেরকে নির্বাসিত করতে। আমার কাছে এটাই মনে হচ্ছে।’